বরিশালে গত ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রজননক্ষম (মা) ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩১টি মামলায় ৩০ জন জেলেকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় একজন জেলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এছাড়াও জেলেদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ৪৩ হাজার মিটার কারেন্টজাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৫টি অভিযানে ৩২৮ টি মামলা করা হয়েছে। যেখানে জরিমানাকৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ জন এবং কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ২৭৮ জনকে। এছাড়া সর্বমোট ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রায় ১৭ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে তা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশনায় গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সাতটি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
বরিশালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণের দায়ে ৪ জেলেকে কারাদণ্ড, প্রায় ১০০০০ মিটার জাল জব্দ ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। জেলা প্রশাসন বরিশালের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলী সুজা এর নেতৃত্বে বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান- ২০২০ উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে ইলিশ মাছ আহরণের সময় জেলা মৎস্য দপ্তর ও নৌ-পুলিশের সহায়তায় সাইফুল ইসলাম (৩২), মোঃ মিরাজ(২০), নয়ন ইসলাম (৩৫), সাগর সিকদার(১৮) নামক ৪ জেলেকে আটক করা হয়। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণের দায়ে আটককৃত ৪ জেলেকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পাশাপাশি প্রায় ১০০০০ মিটার জাল জব্দ ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। জব্দকৃত ১৫ কেজি ইলিশ মাছ স্থানীয় মাদ্রাসায় ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়।
উক্ত অভিযানে প্রসিকিউশন অফিসার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অফিসার( ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস। এছাড়া কীর্তনখোলা নদীতে পৃথক পৃথক স্থানে পরিচালিত এই অভিযানসমূহে আইন-শৃংখলা রক্ষায় নৌ-পুলিশ ও কোস্ট গার্ড বরিশাল সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলী সুজা জানান, আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষ হতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বকুল চন্দ্র কবিরাজ এর নেতৃত্বে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান- ২০২০ উপলক্ষে হিজলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মাছ ধরার অপরাধে হিজলা উপজেলার বিভিন্ন নদীতে পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ২২ জন জেলেকে আটক করেন। আটককৃত ২২ জেলেকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয় । অধিকন্তু প্রায় ৭০০০০ মিটার জাল জব্দ ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। জব্দকৃত প্রায় ৪০ কেজি মাছ স্থানীয় মাদ্রাসা ও দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
মেহেন্দিগঞ্জে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মাছ ধরার অপরাধে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদীতে পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ০৪ জন জেলেকে আটক করে আটককৃত ০৩ জনকে জেলেকে ০১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ০১ জনকে ৫০০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। অভিযানে প্রায় ১৮০০০ মিটার জাল ও প্রায় ৬০ কেজি পরিমাণ ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। জাল পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। মাছ স্থানীয় এতিমখানা, মাদ্রাসা ও স্থানীয় দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসন বরিশালের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ দস্তগীর পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অভিযানে প্রসিকিউশন অফিসার হিসেবে উপস্থিত থেকে সহায়তা প্রদান করেন উপজেলা মৎস্য অফিসার ভিক্টর বাইন। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদীতে পৃথক পৃথক স্থানে পরিচালিত এই অভিযানসমূহে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ, কাজিরহাট থানা পুলিশ ও কালীগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির চৌকস পুলিশ দল।
বানারীপাড়া সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান- ২০২০ উপলক্ষে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অভিযানকালে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণের সময় ১ জন জেলেকে বানারীপাড়া থানা পুলিশ এর সহায়তায় আটক করে ১ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়। পাশাপাশি প্রায় ১৫০০০ মিটার জাল জব্দ ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমীনুল ইসলাম এর নেতৃত্বে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান- ২০২০ উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে প্রায় ৩০০০০ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয় এবং জব্দকৃত ৮ কেজি ডিমওয়ালা ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।