অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত শত বিড়ম্বনা নিয়ে ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছিলেন রাজধানীবাসী। স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে সেই সময় বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতার আর উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল যে ঘরে ফেরার আনান্দ তাদের কতটা! সেই আনান্দের ইতি টেনে স্বজনদের ছেড়ে জীবিকার তাগিদে মন খারাপের বাক্স আর ট্রেনের বিলম্ব শিডিউল সঙ্গী করে মানুষ ফিরছেন এই জাদুর শহরে।
দৈনন্দিন ব্যস্ততা ভুলে ঈদ উদযাপন করতে ভুবনের আনন্দ নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলে সবাই, সে কারণে বদলে গিয়েছিল ঢাকার চিরচেনা রূপ। রাস্তায় যানজট ছিল না, ছিল না মানুষের ব্যস্ত ছুটে চলা। সেই সঙ্গে গণপরিবহনও চলেছে হাতে গোনা। কিন্তু এই ফাঁকার ঢাকা চিত্রের পরিবর্তন শুরু হয়েছে আজ থেকে। উচ্ছ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরে ঈদ আনন্দ উপভোগ শেষে তারাই আজ ইট পাথর আর কংক্রিটের শহরে ফিরছেন।
শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছালো খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি। যেই ট্রেনটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা ছিল। ট্রেনটি বিলম্বে ছেড়ে প্রায় ৫ ঘন্টা বিলম্বে কমলাপুর পৌঁছায়।
একইভাবে শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জানানো হয়েছে, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর এসে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু এটি আসার সম্ভাব্য সময় ১০টা ২০ মিনিট।কিন্তু বেলা ১১টায়ও এসে পৌঁছায়নি।
রংপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ৫ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা ছিল। কিন্তু এটি পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে বিকেল সাড়ে ৩টা।
এছাড়া চিলহাটী থেকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১০ মিনিটে আসার কথা ছিল। এটি আসার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে বেলা ১১টায়।
পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা ছিল। কিন্তু এটি বেলা সাড়ে ১১টায় আসতে পারে বলে স্টেশন থেকে জানানো হয়েছে।
খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুস সালাম বলেন, ট্রেনটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিট ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে অফিস যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি ৫ ঘণ্টা বিলম্ব করলো। এই বিলম্বের কারণে সব প্ল্যানই ভেস্তে গেলো। ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য একবার পোহাতে হয় হাজারো ভোগান্তি। ঈদ শেষে কর্মক্ষেত্রে ফেরার পথের টিকিট পাওয়া, ট্রেনের অতিরিক্ত বিলম্ব সহ ফিরতি পথেও হাজারো ভোগান্তি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এমন ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
একই ট্রেনের যাত্রী সাব্বির আহমেদ বলেন, স্বজনদের সান্নিধ্য ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসা খুবই বেদনার। ঈদে আসলে বাড়ি ফেরা থেকেই ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু প্রিয়জনদের সঙ্গ ছেড়ে যখন ফিরে আসতে তখনই শুরু হয় কষ্টের প্রহর। তবুও জীবিকার তাগিদে আমাদের ফিরে আসতে হয়। সেই সঙ্গে মোটামুটি সব ট্রেনের বিলম্বের কারনে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবার ঈদে ঘরে ফেরা, এবং ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরে আসা মানুষের এমন সব ভোগান্তির অবসান হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ঈদ শেষে ঢাকায় ট্রেনে ফিরতি পথে যাত্রীদের চাপের কারণে ট্রেন আসতে বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীদের ওঠার জন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। এছাড়া যেসব ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে সেই ট্রেনগুলো বিলম্বে ফিরে আসছে ঢাকায়।