পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া এলাকায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে লালুয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ও ধানখালী ইউনিয়নের চারটি গ্রাম।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এছাড়া রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের সব নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ সাতটি গ্রাম তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া চর মোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডার বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ।
এতে ওইসব এলাকার মানুষের রান্নাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কয়েকশ’ পুকুর ও ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতের জোয়ারে আরও পানির চাপ বাড়তে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন ওই এলাকার মানুষ।
এদিকে, কলাপাড়ার নীলগঞ্জের ইউনিয়নের বিধ্বস্ত নীচকাটা স্লুইচ ভেঙে যে কোনো সময় প্লাবিত হতে পারে অন্তত ১২টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন ১২ হাজার মানুষ।
এসব ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য জরুরি সাড়াদানে এগিয়ে আসছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। সাগরপাড়ের মানুষের জান ও মাল নিরাপদ রাখতে একযোগে কাজ করছেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুর পর্যন্ত পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরসহ জেলার কোথাও এখনো পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি। সাগরে টানা ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা নৌকা এবং ট্রলারকে আগেই নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, সংকেত সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সাইক্লোন শেল্টারে যেতে অনিহা মানুষের। তবে সাইক্লোন শেল্টারে জনগণকে নিতে এবং সেখানে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল্লাহ পাটোয়ারী জানান, মানুষ এখনও সংকেত সম্পর্কে জানে না, কত নম্বরে কি হয়, বোঝে না। শুধু মাইকিং পানি ও বাতাসের ওপর নির্ভর করে।
আব্দুর রহিম বলেন, বন্যার-বাদলের সময়ে মাইকে সিগন্যাল শুনি, এর আগে পরে কেউ বুজায় না এহন বুঝি না, পানি বাতাস দেখলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাই।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। বাতাসের বেগ আগের তুলনায় বেড়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও বেরিবাঁধের বাইরের দোকান পাট এবং আশপাশের জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, তিনি ১০ হাজার মানুষের জন্য শুকনো খাবার মজুদ করেছেন। মানুষের খোঁজ খবর নিতে দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ নেওয়া, তাদের নিরাপত্তা, বাড়িতে মালপত্রের নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় মুজিব কেল্লা, সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৮০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৯৩টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে খাদ্য, ডাক্তার ও স্কাউট এবং যুব রেডক্রিসেন্ট ভলান্টিয়ার রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এছাড়া জেলায় জরুরি খাদ্য সহায়তা, শিশু ও গো খাদ্যের জন্য দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। জেলায় ১৩শ’ পুলিশ সদস্য, সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, সিপিপি, স্কাউট, যুব রেডক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমসহ মোট নয় হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত আছেন।