যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর নিয়ে বুধবার বিকাল ৪টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমান বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন। ওই সময় জেলখানায় যেসব ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তার তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা খুঁজে বের করব। এছাড়া সে সময় ফায়ারিং স্কোয়াডে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদেরও খোঁজ নেওয়া হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রতিটির বিচার করা হচ্ছে এখন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশে ছিলাম না ঠিক, তবে দেশের সঙ্গে ছিলাম না তা তো নয়। ডিজিটাল যুগ। বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার যোগাযোগ হয়েছে। যারা ভাড়া বাড়াচ্ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বাসের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হয়েছে। দেশের মানুষের কষ্ট হয় এমন কোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা করোনাকালে সবাইকে বারবার সহায়তা দিয়েছি। কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছি। সবই তো করছি। কিন্তু তেল তো আমাদের কিনে আনতে হয়। সেই কেনা তেলে আবার ভর্তুকি দিয়ে জনগণকে দিতে হয়। বাজেটের সব টাকা যদি ভর্তুকিতে দিয়ে দেই তাহলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে তো মানুষ ভালোভাবে খাচ্ছে, চলছে। কিন্তু প্রকৃত ট্যাক্স দিচ্ছে কয়জন?
করোনার ভ্যাক্সিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত দেশের ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। কেউ ভ্যাকসিন থেকে বাদ যাবে না।
শেখ হাসিনা আরও জানান, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের বাইরে যারা কাজ করছে, যারা নির্বাচনে চালাকি করে দলীয়ভাবে কাজ করে বিশৃঙ্খলা করছে তাদের বিচার করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কপ সম্মেলনের দুইদিনে আমি ৬টি বহুপাক্ষিক সভা ও ৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেই। আমি বিশ্ব নেতৃত্বকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিযে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করি। এগুলো হলো: প্রধান প্রধান কার্বন নির্গমন দেশসমূহকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি প্রণয়ন, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, লস ও ড্যামেজসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা। এবারের সম্মেলনের উল্রেখযোগ্য প্রাপ্তি হচ্ছে বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ধরনের অরণ্য নিধন রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
তিনি আরও জানান, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমি বিল গেটসকে বাংলাদেশের স্থানীয় অভিযোজন মডেলগুলোকে গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য দেশসমূহে কাজে লাগানোর আহ্বান জানাই। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়া যুক্তারাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে জলবায়ু ইস্যু ছাড়াও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ভ্যাক্সিন কূটনীতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়। কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হয়েও জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্যারিস সফরকালে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা বিষয়ে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। কোভিড ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা প্রদান, টেকসই পানি সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকল্পে ১৩০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা এবং বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত পৃথক ৩টি চুক্তি সম্পাদন হয়। এছাড়া কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে ২০ লাখ ভ্যাক্সিন প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্স নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এতো হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা আর দেখতে চাই না। আমরা যেটা আশা করেছিলাম, আমাদের খেলোয়াড়রা তা খেলতে পারেনি। তাই বলে আমি কিন্তু আমাদের ছেলেদের কখনও হতাশ করিনি। আমি তাদের বলি, আরও ভালো খেল। আরও মনোযোগী হও, আরও অনুশীলন করো। কয়েকটা খেলা তো তারা চমৎকার খেলেছে। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিক মতো লাগবে, ছক্কা হবে তাতো বলা যায় না। সবসময় সব অংক মেলে না। এটাও বাস্তব কথা।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিসে সরকারি সফরকালে কপ২৬ এ বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১, ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।