বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে পদ্মা সেতু

ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে পদ্মা সেতু

শামীম আহমেদ, ॥
কোরবানির ঈদের দ্বিতীয় দিনে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী হচ্ছে ছুটিতে আসা মানুষগুলো। কেউ যাচ্ছেন লঞ্চে আবার কেউ যাচ্ছেন বাসে চেপে। তবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ অনেকটাই বেশি। তাই ঈদের আগেই ঈদের পরের ঢাকামুখী বাসের বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার দক্ষিণাঞ্চলের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের কারণে যেখানে খবরের শিরোনাম হতো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সেখানে এবার খুশিতে বাড়ি ফিরে ঈদের আনন্দ শেষে এবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরছেন সবাই। একমাত্র পদ্মা সেতু অতীতের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের স্মৃতি চোখের পলকে পাল্টে দিয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নৌ আর সড়ক যোগাযোগের চিরচেনা দৃশ্য বদলে গেছে। ঢাকা থেকে বিলাসবহুল পরিবহনগুলো যাত্রীনিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে এখন মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌঁছে যাচ্ছে বরিশাল। একইভাবে দক্ষিণের অন্যসব গন্তব্যগুলোর সাথেও রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের সময় কমেছে গড়ে তিন থেকে চারঘন্টা পর্যন্ত।
অপরদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটেও নেই পূর্বের চিরচেনা যানবাহনের ভিড়। আগে যেখানে ফেরির জন্য যাত্রীবাহি পরিবহনগুলো অপেক্ষা করতো, সেখানে ঈদের আগে ও পরে পরিবহনের জন্য ফেরিগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।
সূত্রমতে, বিগত বছরগুলোর মতো এবার ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের লঞ্চের কেবিনের জন্য যাত্রীদের তেমন একটা চাপ ছিলোনা। বরিশাল-ঢাকাগামী সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, ঈদের আগেই গত ১২ জুলাই থেকে আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী বাসগুলোর বেশিরভাগ টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি বাসে অল্প কিছু টিকিট খালি আছে। তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদের দুইদিন পর থেকেই বরিশাল থেকে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন।
অপরদিকে হানিফ, গ্রিনলাইন, ঈগল ও ইলিশ পরিবহনের ঈদের পরের বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বাসচালক ও হেলপাররা বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে বরিশাল থেকে সড়ক পথে ঢাকার যাত্রা সহজ হওয়ায় বাসের যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ১০ গুন বেড়েছে।
অপরদিকে বরিশাল নদী বন্দরে মঙ্গলবার তেমন একটা যাত্রীচাপ ছিলোনা। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, বরিশাল নদী বন্দর থেকে ছয়টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। তবে তেমন একটা যাত্রীচাপ নেই লঞ্চগুলোতে।
ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের আগে ও পরে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে পদ্মা সেতুর টোল ও এক্সপ্রেস সড়কের টোলে তীব্র যানজটের একটা শঙ্কা ছিলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত সকল শঙ্কা কেটে গেছে। যানজটমুক্তভাবেই ঈদের আগে ও পরে আমাদের গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে ঢাকা থেকে বরিশাল এবং বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। প্রায় একই কথা বলেন, গ্রিনলাইন পরিবহণের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার।
বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়কের মতো স্বস্তির ঈদযাত্রা এবার নৌপথেও। অন্য সময় ঈদের অস্তত ৫-৭ দিন আগে থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলোনা। সেখানে এবার তেমন একটা ভিড় নেই। অ্যাডভেঞ্চার নেভিগেশনের মালিক নিজামউদ্দিন বলেন, এবার ঈদে আমদের চরম লোকসানের মুখে পরতে হবে। ঈদের আগে-পরে ২-৪ দিন কিছু যাত্রী হলেও টানা প্রায় ৮-১০ দিনের যে লোকসান তা সামলে উঠা যাবেনা। ঈদ স্পেশাল সার্ভিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়মিত সার্ভিসের ১০টি লঞ্চের সাথে এবার মাত্র চারটি লঞ্চযুক্ত করা হয়েছিলো। অন্যান্য বছরগুলোতে ১৭ থেকে ১৮টি লঞ্চ ডবল ট্রিপ দিতো। মালিকরা এভাবে লোকসানের কথা বললেও লঞ্চে ভিড় না থাকা ও কেবিন পেতে তেমন একটা জটিলতা না থাকায় দারুণ খুশি সাধারণ যাত্রীরা।
ঈদের আগের দিন লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর লঞ্চ টার্মিনালে আসা যাত্রী নাসির মিয়া বলেন, ঈদের আগে এতো শান্তিতে যে লঞ্চে আসতে পারবো সেটা কল্পনাতেও ভাবিনি। সবই পদ্মা সেতুর অবদান। সোমবার শিকারপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা লঞ্চের যাত্রী উজিরপুর পৌর সদরের বাসিন্দা নাসরিন বেগম বলেন, এখন আর লঞ্চে আগের মতো করুণ অবস্থা নেই। এছাড়া লঞ্চের স্টাফদের ব্যবহারও পাল্টে গেছে। আগে যেখানে যাত্রীদের তারা (লঞ্চ স্টাফ) মানুষ বলে গণ্য করতো না, সেখানে এখন ভালো ব্যবহার দিয়ে তারা যাত্রীদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech