বিনোদন ডেস্ক :
যখন কোনো সিনেমা বা নাটক রিলিজ হয়, তখন সেটার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীকে নিয়ে অনেক আলোচনা বা সমালোচনা হয়। পর্দায় মুখ্য চরিত্রের কদর সবসময় বেশিই থাকে। তবে সেই মুখ্য চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পার্শ্বচরিত্রগুলো। তবে কিছু অভিনয়শিল্পী আছেন, যারা অভিনয়গুণে অনেক সময় গল্পের প্রধান চরিত্রকে ছাপিয়ে যায়। সিনেমা, নাটক বা ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তার পেছনে তাদের ভুমিকা মুখ্য চরিত্রের থেকে কম কিছু নয়। আজ তেমনি কিছু পার্শ্বচরিত্রের দক্ষ অভিনেতার কথা বলব।
শুরুতেই কথা বলব নাসির উদ্দীন খানকে নিয়ে।
বর্তমান সময়ে তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ‘তাকদীর’ দিয়ে শুরু ‘মহানগর’ দিয়ে দর্শকমহলে আলোচনায়। তারপর প্রতিটি কাজেই তিনি স্বচরিত্রে অসাধারণ খেল দেখিয়েছেন বলতেই হয়। ইতোমধ্যে তার কিছু ডায়ালগ দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছে। যেমন, ‘পরাণ’ সিনেমায় তার একটি ডায়ালগ ছিল: ‘আপনার মনটা হইতেছে সাকিব আল হাসানের স্পিন বলের মতো, খালি সুইং করে।’ তার এক্সপ্রেশন, সংলাপ ডেলিভারি, এবং বডি ল্যাংগুয়েজ দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছে। পর্দায় ভিলেন, সন্ত্রাসী লুকে যেমন তাকে মানায় আবার সিনেমায় সিআইডি চরিত্রেও দারুণ মানিয়েছে। সেই সঙ্গে তার হাস্যরসাত্মক ডায়ালগও দর্শকদের বিনোদন দেয়। সম্প্রতি ‘হাওয়া’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্র নাগুরূপে অসাধারণ অভিনয় করে রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এরপরে যার নাম বলব তিনি হলেন সুমন আনোয়ার।
বাংলাদেশের টিভি নাট্যনির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এবং সফল নির্মাতার নাম সুমন আনোয়ার। নির্মাণের পাশাপাশি তিনি অভিনয়েও দেখাচ্ছেন মুনশিয়ানা। তিনি যখন কোনো চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন তাকে সুমন আনোয়ার নয় বরং সেই চরিত্রের মানুষটিই মনে হয়। নেগেটিভ ক্যারেকটারে তার দারুণ অভিনয় বরাবরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি যখন সে ধরনের চরিত্রে কাজ করেন মনে হয় তিনি আসলেই একজন মন্দ লোক। সুমন আনোয়ার নেগেটিভ ক্যারেকটার এত ভালো অভিনয় করেছেন যে দর্শকদের একাংশ তাকে প্রধান খলনায়কের ভূমিকায় দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন।
নাটক কিংবা সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নেয়া অভিনেতা ফারুক আহমেদ। তিনি জনপ্রিয় নাট্যকার ও লেখক হুমায়ুন আহমেদের নাটকের নিয়মিত মুখ ছিলেন। হুমায়ুন আহমেদ তার নাটক বা সিনেমার চরিত্রগুলোকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতেন। তার নাটক বা সিনেমার চরিত্রগুলোতে অভিনয় করা অন্যতম একজন হলেন ফারুক আহমেদ। তিনি তার ক্যারিয়ারের সর্বাধিক কাজ করেছেন হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে। তাকে পর্দায় দেখলে দর্শকরা হুমায়ুন আহমেদকে স্মরণ করেন। প্রতিটি নাটকে তার অভিনয় যেন যোগ করে আছে অন্য মাত্রা। কখনো সিরিয়াস মুড বা কমেডি চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অভিনয়গুণে। সাম্প্রতিক কাজের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর আগের নাটকের ক্লিপ এখনো বেশ জনপ্রিয়। ফারুক আহমেদের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে হুমায়ুন আহমেদ তার লেখা ‘লিলুয়া বাতাস’ বইটি তার নামে উৎসর্গ করেছিলেন
হুমায়ুন আহমেদের নাটকে পার্শ্বচরিত্রে শুধু ফারুক আহমেদ দর্শকদের নজর কাড়েননি, সে তালিকায় আছেন স্বাধীন খসরু ও ডা. এজাজুল ইসলামের নাম।
এজাজুল ইসলাম মূলত একজন ডাক্তার। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মাধ্যমে তার নাটকে আগমন। পরবর্তী সময়ে তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। এর পর তিনি বেশ কয়েককটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি তারকাঁটা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত হন।
এখন কথা বলব অভিনেতা স্বাধীন খসরুকে নিয়ে
প্রয়াত সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সব কটি নাটক ও সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন তিনি। লন্ডনে নাট্যতত্ত্বের ওপর লেখাপড়া করেছেন। অসাধারণ অভিনয়প্রতিভা তাকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়। অনেক দিন ধরেই স্বাধীন খসরু অভিনয়ে অনিয়মিত। তবে এর মধ্যে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের জন্য একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে আরও গুটিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বাস করছেন।