বিনোদন ডেস্ক :
‘পরাজয় মনের ব্যাপার। কেউই পরাজিত নয়, যতক্ষণ-না সে মন থেকে পরাজয় মেনে নেয়।’ এই উক্তিটি খোদ দ্য মার্শাল আর্ট স্পেশালিস্ট ব্রুসলির। অসাধারণ ফিটনেস, ক্ষীপ্র গতিতে হাতের মুভমেন্ট, উচ্চ থেকে উচ্চতর ফ্লাইং কিক, আর দক্ষ মার্শাল আর্ট স্কিলস দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করার নাম ব্রুসলি।
যার সুবাদে বর্তমানে মার্শাল আর্ট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। আজকের বিশ্লেষণপর্বে কথা বলব ব্রুসলি দি অ্যাকশন হিরো তথা এই মার্শাল আর্ট স্পেশালিস্টকে নিয়ে। অভিনয়ে পথচলা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শুরুতে। তবে একটু পেছনের গল্প থেকে শুরু করতে চাই। যেটি অনেকেরই বোঝার ভুল–ব্রুসলি হয়তো চীনের অধিবাসী ছিলেন। তবে তিনি কিংবা তার পরিবার কখনোই চীনের অধিবাসী ছিলেন না।
তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে ১৯৪০ সালের ২৭ নভেম্বর। পিতা লি হুই চোয়েন পেশায় ছিলেন নাট্যশিল্পী। এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথমে ব্রুসলির নাম ছিল লি জুন ফান। তবে নামটি উচ্চারণে ঝামেলা পোহাতে হওয়ায় হাসপাতালের একজন নার্স নবজাতক ব্রুসলির বার্থসার্টিফিকেটে ‘ব্রুসলি’ নামটি লেখেন। বেড়ে ওঠা, স্কুলিং হংকংয়ের কাউলুনে। ১৩ বছর বয়সে মাস্টার ইপ ম্যানের কাছ থেকে উইং চুন স্টাইলের মার্শাল আর্ট শেখা শুরু।
তবে মার্শাল আর্ট শেখার পেছনের কারণ ছিল সমবয়সীদের সঙ্গে মারামারিতে ঠিকমতো পাল্লা দিতে না পারা। ছোট্ট ব্রুসলির মাথায় তখন এলো মার্শাল আর্ট, কুংফু শিখে কাবু করবেন প্রতিপক্ষকে। একই সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তীব্র ঝোঁকে মাত্র ছয় বছর বয়সেই সুযোগ পান ‘দ্য বিগিনিং অব আ বয়’ মুভিতে।
স্কুলে থাকাকালীন একদিকে পর্দায় তার সাবলীল এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিয়ে মনজয়, অন্যদিকে কখনো বক্সিং কৌশল না জানা ব্রুসলি কেবল কুংফুং ট্রিকস খাটিয়ে কাবু করে ফেললেন স্কুলের বক্সিং চ্যাম্পিয়নকে। এদিকে ১৯৫৮ সালে নাচের প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হন।
১৮ বছর বয়সে প্রায় বিশটিরও বেশি মুভিতে কাজ করেন তিনি। ভক্তদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘খুদে ড্রাগন’। ইউনিভাসির্টি অব ওয়াশিংটনে অধ্যয়নকালীন কুংফু শিখিয়ে পড়াশোনার খরচ বহন করতে লাগলেন ব্রুসলি। কুংফু শেখার সুবাদে পরিচয় হয় সুইডিশ ছাত্রী লিন্ডা এমেরির সঙ্গে। প্রথমে পরিচয়, ভালোলাগা এর পর ১৯৬৪ সালে বিয়ে, পরবর্তী সময়ে চলে আসেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাদের প্রথম সন্তান ব্র্যানডনের জন্ম হয় ১৯৬৫ সালে।
মার্শাল আর্টে ব্রুসলির কিছু নিজস্ব স্টাইল যেমন, ঘুষি দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করার কৌশল তাকে অন্যদের তুলনায় বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ফলস্বরূপ হলিউড অভিনেতা স্টিভ ম্যাককুইন ও জেমস কোবার্ন তার ছাত্র বনে যান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান চলচ্চিত্রে এশিয়ানদের কাজের সুযোগ কমতে থাকলেও টিভি সিরিজ ‘দ্য গ্রিন হর্নেট ‘ দিয়ে ব্রুসলি হয়ে ওঠেন এশিয়ান ফিল্ম স্টার।
মুভিতে এশিয়ার এই প্রথম অ্যাকশন হিরোর দুর্ধর্ষ পাঞ্চ, ফ্লাইং কিকের ভক্ত ছিল অগণিত। কাজ করেন ‘দ্য বিগ বস’, ‘দ্য চাইনিজ কানেকশন’, রিটার্ন অব দ্য ড্রাগন’ মুভিতে। রিটার্ন অব দ্য ড্রাগন’ মুভিতে রোমান কলোসিয়ামে, ব্রুস ও নোরিসের একটি ফাইটিং দৃশ্যকে ক্লাসিক সিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ক্ষীপ্র গতিতে ফাইট করতেন তিনি, হকচকিয়ে যেত প্রতিপক্ষও। পাল্টা আঘাত করার সময় পেতেন না। ১৯৬২ সালে একটি ফাইটে মাত্র ১১ সেকেন্ডে ১৫টি ঘুষি দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেছিলেন ব্রুসলি। তবে ব্রুসলির অ্যাকশন স্কিলস ছাড়াও বেশ কিছু দিক অনেকেরই জানার বাইরে
ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না ব্রুসলি। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন। ফিলোসফি পড়তে, কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন অনেক। তার দার্শনিকতাকে ঘিরে ‘দ্য ওয়ারিয়র উইথইন’ নামে একটি বই আছে। এ ছাড়া তার কবিতা সংকলিত ‘দ্য টাও অব জিতকুন ডো’ নামের একটি বইও আছে।
১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আচমকাই অ্যাপার্টমেন্টে তার অস্বাভাবিক মরদেহ পাওয়া যায়। তার অভিনীত ‘এন্টার দ্য ড্রাগন’ ছবিটির মুক্তি দেখে যেতে পারেননি ব্রুসলি। তার মৃত্যু এখন অবধি রহস্যে মোড়ানো। অনেক ভক্তের মনে নানারকম প্রশ্নেরও জোয়ার তুলেছিল তার মৃত্যু। তবে তার সদুত্তর মেলেনি আজও। মাত্র ৩২ বছর বয়সের জীবনে তার প্রাপ্তি, অর্জনের পরিধি ছিল ব্যাপক। ক্ষণজন্মা এ শিল্পীর আচমকা মৃত্যুর পরও তার ভক্তসংখ্যা আজও অগণিত।