বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

পৃথিবীর বুকে লুকানো মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া

পৃথিবীর বুকে লুকানো মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া

বিনোদন ডেস্ক :
পৃথিবীর মহাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে যে ৭টি নাম মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা খুব পরিচিত। কিন্তু যদি বলি একটি লুকোনো মহাদেশকে মিস করে গেছেন!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এমন এক বিস্তৃত এলাকার সন্ধান পেয়েছেন, যেটি পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। নিউজিল্যান্ড এই মহাদেশের পানির ওপর থাকা একমাত্র অংশ। বাকি সবটুকু পানির নিচে। এ কারণে বিজ্ঞানীরা মহাদেশটির নাম দিয়েছেন জিল্যান্ডিয়া। এর আয়তন ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি। আকারে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।

তবে সমস্যা হলো এটি সাগরে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ ফুট গভীরে ডুবে গিয়ে এখন লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রায় ৯৩ থেকে ৯৪ শতাংশই প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে নিমজ্জিত। এর উপকূল জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্য শত শত বিলিয়ন ডলার হতে পারে। শত শত বিলিয়ন ডলারের সম্পদে পরিপূর্ণ ডুবে থাকা মহাদেশটি ভূবিজ্ঞানীদের খোঁজ করতেই সময় লেগে গেছে পৌনে চারশ বছর।

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে বিভিন্ন দ্বীপ জরিপ করতে গিয়ে ১৮৯৫ সালের দিকে সর্বপ্রথম এই জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন স্কটিশ প্রকৃতিবিদ স্যার জেমস হেক্টর। তার দেয়া তথ্যমতে এটি পানিতে ডুবে থাকা একটি মহাদেশীয় এলাকার চূড়া। প্রায় ৫৫ কোটি বছর আগের একটি প্রাচীন সুপার কন্টিনেন্টের অংশবিশেষ হচ্ছে এটি।
ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার থেকে একদমই আলাদা এই জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ। ‘জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে আছে, জিল্যান্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ১৩ কোটি বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল অ্যান্টার্কটিকা থেকে। আর ৬ থেকে ৮ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া বিচ্ছিন্ন হয় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকেও। এরপর ক্রমেই এটি পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। ধারণা করা হয়, ২.৩ কোটি বছর আগে সম্পূর্ণ মহাদেশটিই নিমজ্জিত ছিল।

তবে তাতেই কি বিজ্ঞানীরা একে মহাদেশ বলে আখ্যা দিয়ে দিলেন? না, সেটিও স্পষ্ট করা হয়েছে, বিশাল ভূখণ্ডের মহাদেশ হতে গেলে চারটি বিষয় থাকা জরুরি। আশপাশের অঞ্চল থেকে উঁচু হতে হবে, ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে হবে, এবং সমুদ্র তলদেশের থেকেও পুরু ভূস্তর থাকতে হবে যার সব কটি জিল্যান্ডিয়ার মধ্যে আছে। তা ছাড়া এর ভূখণ্ডে আগ্নেয়, রূপান্তরিত ও পাললিক শিলার উপস্থিতি একে মহাদেশ হিসেবে বিবেচনায় শক্ত অবস্থানেই রেখেছে।
২০০৭ সালে ‘ইন সার্চ অব এনশেন্ট নিউজিল্যান্ড’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। সেখানে নতুন এই মহাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছিলেন বইটির লেখক তথা গবেষক হামিশ ক্যাম্পবেল। তিনি জানান, ‘আগে পুরো জিল্যান্ডিয়া মহাদেশটাই পানির তলায় ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে প্লেট মুভমেন্ট-এর ফলে পানির উপরে উঠে আসে নিউজিল্যান্ড।’

একটি মহাদেশের স্বীকৃতি পেতে যা দরকার, জিল্যান্ডিয়া তার সব কটি পূরণ করেছে বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। তাদের বর্তমান প্রচেষ্টা পৃথিবীর মহাদেশের তালিকায় আরেকটি নতুন নাম যুক্ত করার জন্য স্বীকৃতি আদায়। এটি এখন সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু তবুও জিল্যান্ডিয়ার অনেক কিছুই এখনো অজানা। এটা আকৃতিতে এত সরু কেন, কেনই-বা এটা সাগরে তলিয়ে গিয়েছিল, আসলে কখনো এটা পানির ওপরে ছিল কি না, থাকলেও কোনো প্রাণীর বসবাস ছিল কি না–এগুলো এখনো ভূতত্ত্ববিদদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech