আইসিইউতে শুয়ে আছেন রোগী। তাঁকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন শত শত মানুষ। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জনাতে পেরে বেডে শুয়ে চিকিৎসককে রোগী বললেন, ‘ডাক্তার, প্রথমবার এসেছি; তাই এত লোকের ভিড়। দ্বিতীয়বার এলে কেউ আসবে না।’ এমন রসিকতায় হেসে উঠেন চিকিৎসকেরাও।
বরাবরই হাসাতে পছন্দ করেন এই মানুষটি। সুস্থ থাকাকালে হাসিয়ে রাখতেন দেশ ও বিদেশের মানুষদের। তিনি আর কেউ নন, কয়েক দিন আগে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ কোটি মানুষের পছন্দের অভিনেতা স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান ও উপস্থাপক আবু হেনা রনি (৩০)। তিনি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তাঁর (রনি) রসবোধ ভালো। মানসিক শক্তিও দৃঢ়। তিনি দ্রুতই সেরে উঠবেন বলে আমরাও প্রত্যাশা করছি। তবে, এখনই তাঁকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।’
যদিও মিরাক্কেল খ্যাত এনটিভির হা-শো’র উপস্থাপক, কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি আজ রোববার সকালে খিচুড়ি খেয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে কয়েকটি ডিমও খেয়েছেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রনির শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায়। কালো হয়ে গেছে তাঁর মুখমণ্ডল। দুই হাতের পুরোটাই ব্যান্ডেজ করা। এ ছাড়া শরীরের নানা অংশ পুড়ে গেছে।
আবু হেনা রনি বেশ জনপ্রিয়ও। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তাঁর ভক্তসহ অনেকেই তাঁকে দেখতে যাচ্ছেন। যদিও অধিকাংশই রনির সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তবে, এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে।
এদিকে, বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন বললেন, ‘রনির মানসিক শক্তি অনেক বেশি। যেটা তাঁকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে। তবে, তাঁর স্ত্রী ও পরিবার খানিকটা ভেঙে পড়েছে। গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর দেখছেন। তারা শুনছেন, রনি শঙ্কামুক্ত নয়। তবে, রনি যে শঙ্কাযুক্ত, তা কিন্তু আমরা বলছি না।’
ডা. এস এম আইউব হোসেন বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, রনির শ্বাসনালী অনেক পুড়ে গেছে। আজ মনে হলো, শ্বাসনালী খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। রনির মুখমণ্ডলটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। তবে মেলা পুড়লে, চামড়া উঠে যেত। আর যখন দুর্ঘটনা ঘটে, বোধহয় রনি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছিলেন। সেজন্য, ক্ষতি কম হয়েছে। বলা চলে, আগের চেয়ে রনির শরীরের উন্নতি হয়েছে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘রনির সঙ্গে আরেকজন পুলিশও চিকিৎসাধীন। তাঁর শ্বাসনালী রনির চেয়ে বেশি পুড়ছে। আগামীকাল এবং পরশু পর্যাবেক্ষণ শেষে এ বিষয়ে আরও ভালোভাবে বলা সম্ভব।’
এদিকে, আবু হেনা রনির চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাঁর সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন স্ত্রী রুমানা রশীদ সম্পা। আজ রোববার দুপুরে রনি ও পুলিশ কনস্টেবল মো. জিল্লুর রহমানের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে রুমানা রশীদ সম্পা এ দোয়া চান।
রুমানা রশীদ সম্পা বলেন, ‘হাসপাতালের আন্তরিকতা ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা এবং এখন পর্যন্ত যে চিকিৎসা চলছে, তাতে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। তাঁরা (মেডিকেল বোর্ড) যা ভালো মনে করবেন, আমরা সেটাই করব।’ সে সময় স্বামীর সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান সম্পা।
রনির ম্যানেজার সাদিক আল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আসছেন। মিডিয়া জগতের লোকজন যেমন আসছেন, তেমনি তাঁর ভক্তরাও আসছেন। অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। আমাদের সঙ্গে দেখা করে ও কথা বলে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া কলকাতা থেকেও লোকজন ফোনে রনির নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। আজ সকাল থেকে আবু হেনা রনি খেতেও পারছেন। সকালে সাত থেকে আটটি ডিম খেয়েছেন। খেয়েছেন খিচুড়িও।’
কথা প্রসঙ্গে রনির কৌতুক মানসিকতা আসে। সে সময় সাদিক আল হাসান বলেন, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভানে, এটাও তেমন। তিনি রসিকতা করতে পছন্দ করেন। এটা করতে পারলে তিনি ভালো থাকেন। সেজন্য, শুয়ে শুয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গেও রসিকতা করছেন।’
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) চার বছরপূর্তির অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী মঞ্চের পাশে একগুচ্ছ গ্যাসের বেলুন বিস্ফোরণ হয়। সেসময় কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি ও পুলিশের চার সদস্য দগ্ধ হন।
আবু হেনা রনি ছাড়াও পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন, রুবেল মিয়া, জিল্লুর রহমান ও ইমরান হোসেন দগ্ধ হন।