বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

৭৬তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৭৬তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট :
আজ, ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের ৭৬ তম জন্মদিন। ইতিমধ্যেই তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। তবে এই আওয়ামী লীগে তাঁর যোগদান নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই জায়গায় তাঁকে পৌঁছাতে গিয়ে হারাতে হয়েছে অনেক কিছু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড –

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibar Rahman) কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ব্যাপী বিস্তৃত। ১৯৫৪ থেকে ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন হাসিনা। ১৯৭৩-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হাসিনা।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬-র দিকে ৬ দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭৫-এর ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই সময় হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সবথেকে মর্মান্তিক। তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায় নিজে বাড়ির সিঁড়িতেই। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঐদিন মৃত্যু হয়েছে হাসিনার (Sheikh Hasina) পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের। শুধু বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর বোন।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী-

পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছয় বছর ভারতে থাকেন শেখ হাসিনা। প্রবাসে ৬ বছর থাকার পর ১৯৮১-র ১৭ মে দেশে ফেরেন। তবে তিনি ভারতে থাকাকালীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লি যান তাঁর খোঁজ-খবর নিতে। তবে সেখানে তিনি একা ছিলেন না, তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওয়াজেদ মিয়াও। যাঁকে পরবর্তীতে বিয়ে করেন হাসিনা। ওয়াজেদ মিয়া নিজের বইতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।

এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তৎকালীন আওয়ামী লীগের (Awami League) অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাঁদের সেই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো। ওয়াজেদ মিয়ার লেখা বই অনুযায়ী, ঢাকায় ১৯৮১-র ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের ব্যাপারে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় করতে উল্লেখিত সকল নেতৃত্বরা গিয়েছিলেন দিল্লি। পাশাপাশি হাসিনার পরিবারের কিছু সদস্য চেয়েছিলেন যেন তিনি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন।

কিন্তু এরকম অকল্পনীয় মর্মান্তিক ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করাও উচিত না বলে মনে করেছিলেন ওয়াজেদ। তবে হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বইতে দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করার বিষয়ে প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন দলের অন্যতম সিনিয়র নেতা আব্দুল রাজ্জাক। মূলত উল্লেখিত সমস্ত তথ্যই হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার রচিত’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইতে লেখা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা-

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার, ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বার বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ১৯৯৬-র ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে খালেদ জিয়ার সরকার ১৫ দিনের মাথায় ৩০ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হয়। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ মোকাবিলায় সব সময়ই আপোষহীন হাসিনা। ১৯৭১-এ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে তাঁর সরকার।

১৯৯৬-তে তাঁর দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাধ্য করে। ডেপুটি স্পিকার বলেছেন, শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শক্তির উত্থান হত না। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তাতে হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে তাঁদেরও হত্যা করা হত। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জন্ম না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব হত না’।

হাসিনার মানবিকতা ও দূরদৃষ্টি-

কেউ কেউ তাঁর মধ্যে মাদার তেরেসাকে খুঁজে পান, তো কারোর কাছে তিনি ‘দয়ালু মা’। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করে, নোবেল বিজয়ী তিন নারী হাসিনাকে ‘দয়ালু মা’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে পরতে পরতে রয়েছে নেতৃত্বের ছাপ। সততা, সাহস ও কৌশলের সঙ্গে মোকাবিলা করে নতুন রাজনীতির ধারা তিনি সূচনা করেছেন। বাংলাদেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তা না হলে যে জনজীবনের সঙ্গে একসময় দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকত, সেই জনজীবন এখন অনেক বেশি সুখকর ও স্বস্তিদায়ক। আজ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম প্রধান অনুঘটক হাসিনা।

ভূরাজনীতিতে তাঁর স্বাধীন একটি কণ্ঠস্বরও তৈরি হয়েছে। বিশ্বে তিনি নিজের উপস্থিতি অনুভব করাচ্ছেন এবং বিশ্ব নেতারাও তাঁকে আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে বিবেচনা করেন। উপমহাদেশীয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এবং এশীয় দেশগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দারুন সাহস ও কূটনৈতিক দক্ষতা দেখিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চার যুগের অধিক ধরে নিজের দলকে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। দলের জন্যই নয় দেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শেখ হাসিনা।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech