বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

পটুয়াখালীতে বাড়ীর ছাদে মাছ চাষ

পটুয়াখালীতে বাড়ীর ছাদে মাছ চাষ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
বায়োফ্লক পদ্ধত্বিতে পটুয়াখালী জেলায় সর্বপ্রথম বাড়ীর ছাদে পরিক্ষামুলক মাছ চাষে সফল হয়েছেন পটুয়াখালী আইসিটি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা কলাতলা বালুরমাঠ নিবাসী সোহেল রানা। নিজ বাড়ীর ছাদে স্বল্প পরিসরে পরিক্ষামুলক ভাবে শিং এবং কৈ মাছ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন ২৩ অক্টোবর-২০১৯। ১৭-১৮ দিন পর তিনি লক্ষ করেন প্রতিটি মাছ ৪-৫ ইঞ্চি সমপরিমান বড় হয়েছে।

৫ ডিসেম্বর বৃহঃস্পতিবার সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে মাছগুলো বিক্রি উপযোগী। এক্ষত্রে সোহেল রানা উল্লেখ করেন, পটুয়াখালীতে সর্বপ্রথম তিনি পরিক্ষামুলক ভাবে নিজ বাড়ীর ছাদে বায়োফ্লক পদ্ধত্বিতে মাছ চাষ করেছেন। তাই যে মাছ উৎপাদন হয়েছে সেগুলো বিক্রি করে পটুয়াখালী আইসিটি ক্লাবের জন্য ব্যায় করবেন।

এছাড়া সোহেল রানা আরও বলেন, বর্তমানে অনেক বেকার যুবক কর্মক্ষেত্রের অভাবে মাদকাসক্ত হচ্ছেন। তাই তিনি বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী করার লক্ষে বিনামুল্যে প্রশিক্ষন দিতে চান বায়োফ্লক পদ্ধত্বিতে মাছ চাষের ব্যাপারে। ইতিমধ্যে কলাপাড়া, এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলা থেকে কয়েকজন সোহেল রানার সাথে যোগাযোগ করেছেন প্রশিক্ষনের জন্য।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ছাদে মাছ চাষ করার জন্য দরকার এয়ারেশন, পিএইচমিটার, টিডিএস মিটার, অ্যামোনিয়া কিট এবং ড্রাম। তবে পানি ১ মাস পূর্বে ফিল্টার করে রাখতে হয়।

বায়োফ্লকের প্রধান উপাদান হলো হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া। বায়োফ্লকের কাজ হল মাছের অতিরিক্ত খাদ্যের পঁচন এবং মলমূত্র থেকে উৎপাদিত নাইট্রোজেনাস কমানো। বায়োফ্লকে হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত অ্যামোনিয়াকে খেয়ে জৈব প্রোটিন কনা বা ফ্লক সৃষ্টিতে সহয়তা করে।

এই জৈব কনা বা ফ্লক গুলো মাছ তাদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। বায়োফ্লক ড্রামে অ্যামোনিয়াকে ভাঙ্গতে হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার শক্তি যোগানোর জন্য কার্বন মিডিয়া যোগ করতে হয়। মাছের সম্পূরক খাদ্য ছাড়াও, হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন উৎসাহিত করতে এবং নাইট্রোজেনাস বর্জ্য কমাতে কার্বনের একটি পরিপূরক উৎসের যোগান ড্রামে যোগ করতে হয়।

মাছের খাদ্যে কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত প্রায় ৭-১০: ১ অনুপাত রয়েছে । আর হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া প্রায় ১২-১৫:১ অনুপাতে বেশি সক্রিয় থাকে। অনুপাত বাড়াতে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য বায়োফ্লক ড্রামে কার্বন উৎস চিনি বা একটি মিশ্রিত মিডিয়া যোগ করতে হয়। এই মিডিয়াতে গুড়, চিনি, সুক্রোজ এবং ডেক্সট্রোজ অন্তর্ভুক্ত থাকে। আবার কিছু উৎপাদক গ্লি­সারিন ব্যবহার করে থাকে।

কার্বন উৎসের ফিড এবং সংমিশ্রণের প্রোটিন সামগ্রীর সাথে প্রয়োগের হারগুলি পৃথক হবে, তবে একটি প্রমানীত ও ভাল নিয়ম হলো প্রতি কেজি খাদ্যের জন্য প্রায় ০.৫-১ কেজি কার্বন উৎস প্রয়োজন হয়। বেশি প্রোটিন যুক্ত খাদ্যে বেশি পরিমাণে কার্বনের পরিপূরক প্রয়োজন।

কার্বন যোগ করার আসল নিয়ম হলো ড্রামের পানির অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইটের মাত্রা বিবেচনা করে। একটি বায়োফ্লোক প্রজেক্ট সফল ও দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য বায়োফ্লোক পরিচালনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। তা হলোঃ – হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া মাছের খাদ্য ও মলমূত্র থেকে উৎপাদিত বিষাক্ত অ্যামোনিয়াকে ভেঙ্গে বা খেয়ে ব্যাকটেরিয়া যুক্ত জৈবপুষ্টি কণায় রূপান্তরিত করে।

উৎপাদিত ফ্লক গুলোর মধ্যে কিছু পরস্পরের খাদ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হয়। যেমন- প্রোটোজোয়া এবং কিছু ক্ষুদ্র অণুজীব দ্বারা কিছু অত্যান্ত পুষ্টিকর জৈবকণা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার ফলে তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়ে, জৈব বস্তু পুঞ্জে রূপান্তরিত হয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীব ও প্রোবায়টিক ব্যাকটেরিয়া গুলি ছোট ছোট ফ্লকে কলোনি সৃষ্টি করে থাকে এবং তা মাছ ও চিংড়ির খুবই পুষ্টিকর খাবার হিসাবে ব্যবহ্নত হয়।

অপরদিকে এরা বায়োফ্লোক পদ্ধতির পানির গুণগতমান ঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং পানি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা কমায়। বায়োফ্লক ট্যাংকে প্রাকৃতিক ভাবে ২০% খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা যেমন কমে তেমনি, জৈব সুরক্ষা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ছাদ কৃষির মতো ছাদে মাছ চাষ খুবই সহজ এবং অল্প জায়গায় অধিকসংখ্যক মাছ চাষ করা যায়। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মাছ চাষ করবেন এবং মাছ বিক্রির অর্থ গরীবদের মাঝে বিতরন করবেন বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী প্রানী সম্পদের কর্মকর্তা এ ব্যাপারে জানান, পটুয়াখালীতে বানিজ্যিক পরিসরে বায়োফ্লক পদ্বত্বিতে মাছ চাষ শুরু হয় নি। সোহেল রানার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech