ফুটবলের সবুজ আঙিনায় সেরা খেলোয়াড় কে? এই লড়াইটা প্রায় দেড় যুগ ধরে চলেছে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে। তারা মাঠে নামবেন, নতুন নতুন রেকর্ড গড়বেন এটিই যেন ছিল রোজকার ব্যাপার স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার মেসি ও রিয়াল মাদ্রিদের রোনালদো মিলে ব্যক্তিগত লড়াইটাকে নিয়ে যান কিংবদন্তির পর্যায়ে। একটা সময় দুইজন মাঠে নামতেন রেকর্ড গড়তে, রেকর্ড ভাঙতে। দেখা যেত একজনের জোড়া গোলের জবাব আরেকজন দিতেন হ্যাটট্টিক করে। আজ একজন কোনো পুরস্কার জিতলে কাল আরেকজনের হাতে দেখা যেত নতুন কোনো অর্জনের স্মারক।
সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন দুজনই। মেসি এখন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে, রোনালদো সৌদি আরবের ক্লাব আল-নাসেরে। একই রাতে দুইজনের মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকেন না ভক্তরাও। তবে, অনেকদিন পর যেন ফিরে এলো পুরনো সময়। মাত্র সোয়া চার ঘন্টার ব্যবধানে মাঠে নামলেন দুজন, গড়লেন দুটো রেকর্ড।
মেসি-রোনালদো ক্লাবে যতটা ভালো খেলেন, জাতীয় দলে তার সিকিভাগও দেন না, এমন অপবাদ শুনতে হয়েছে দুজনকেই। অপবাদ পেরিয়ে ২০১৬ সালে নিজ দেশ পর্তুগালকে ইউরো চ্যাম্পিয়ন করেছেন রোনালদো। পরে দেশের হয়ে জিতেছেন উয়েফা নেশন্স লিগ। জাতীয় দলের অর্জন তখনও অধরা মেসির। ২০২১ সালে প্রথমবার জেতেন কোপা আমেরিকার শিরোপা। তারপর ফিনালিসিমার শিরোপাও নিজেদের করে নেয় আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপ জিতে মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথটাই থামিয়ে দেন মেসি।
রোনালদোকে সমকালের অন্যতম সেরা হিসেবে রেখে মেসি ঢুকে গিয়েছেন সর্বকালের সেরার তালিকায়। তবুও এতটুকু কমেনি এই দুজনের লড়াইয়ের আবেদন। বিশ্বকাপের পর সর্বশেষ ক্লাব ফুটবলে প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হন মেসি-রোনালদো। মেসির ক্লাব পিএসজি আর রোনালদোর আল-নাসেরের লড়াই ছাপিয়ে মূখ্য ছিল দুইজনকে একসঙ্গে দেখতে পাওয়া।
এরপর সময় গড়িয়েছে। ক্লাব ফুটবলের ঠাসা সূচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দুজনই। আন্তর্জাতিক বিরতিতে এখন দেশের হয়ে খেলছেন তারা। ইউরো বাছাইপর্বে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত পৌনে দুইটায় মাঠে নামে রোনালদোর পর্তুগাল। লিচেইনস্টেইনের বিপক্ষে মাঠে নেমে করলেন জোড়া গোল। তার আগে গড়লেন জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৯৭ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামার রেকর্ড।
এর ঘন্টা চারেক পর আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ জয়টা দেশের মানুষের সামনে দেশের মাটিতে উদযাপন করতে পানামার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামেন মেসিরা। ৮৯ মিনিটের সময় ফ্রি-কিক থেকে গোল করে মেসি অর্জন করেন অসাধারণ একটি মাইলফলক। রোনালদোর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৮০০ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন মেসি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির গোল এখন ৯৯ টি, ক্লাবে ৭০১ টি।
সেরার তর্ক থেমে গেলেও যার যার ভক্তদের কাছে তাদের প্রিয় তারকা সবসময়ই সেরা। তাই মাঠে তাদের সদম্ভ বিচরণ দেখে পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিলেন অনেকেই। সেই সময়টায়, যখন খেলার মাঠে মেসি-রোনালদো নামতেন আর ভক্তরা বসে থাকতেন রেকর্ডের হিসাব মেলাতে!