ডেস্ক রিপোর্ট :
সরকার বিরোধী আন্দোলনে নাশকতা, পুলিশকে মারধর, কর্তব্যকাজে বাধাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা কয়েকটি মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ ১০৮ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই তালিকায় যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনামও আছেন।
আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একাধিক বিচারক পৃথক পৃথক মামলায় এ আদেশ দেন।
এ নিয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সরকারের সাজানো মামলায় পরিকল্পিতভাবে পূর্ব নির্ধারিত একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে এবং নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অযোগ্য করার জন্যই এই সাজা হচ্ছে।
পল্টন থানার মামলা
পল্টন থানার মামলায় বিএনপি নেতা টুকুসহ ২৫ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এই আদেশ দেন। বিচারক রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেকের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন এবং তা অনাদায়ে আরও একমাস করে কারাভোগের নির্দেশ দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন জুয়েল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে ফেনীতে যাওয়ার কথা ছিল। সে সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আসামিরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা।পরে পুলিশ পল্টন থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে কর্তব্যকাজে বাধাদানের মামলা করেন। মামলার পরে পুলিশ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আজ সেই মামলার রায় এলো।
নিউমার্কেট থানার মামলা
পুলিশকে মারধরের অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় আজ ঘোষণা করেন। বিচারক রায়ে দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারায় আসামিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড ভাগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অপরদিকে দণ্ডবিধি ৩২৩ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও দুই মাসের কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিএনপির হরতাল অবরোধ চলাকালে নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটে পুলিশের কাজে বাধা প্রদান করেন আসামিরা। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
বংশাল থানা মামলা
রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খন্দকার আখতার হামিদ খান পবনসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীকে সাড়ে তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী আজ এই আদেশ দেন। এদিন আদালতে আসামিদের অনুপস্থিতে বিচারক সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বংশালের নবাব কাটরায় হোটেল সুফিয়া (প্রাইভেট) লিমিটেডের সামনে বিএনপির একদল নেতাকর্মী জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা দোকানপাট ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বংশাল থানায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ৬২ জনের বিরুদ্ধে অবিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রের পরে আদালতে বদলি হয়ে আসলে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু করেন আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারক আজ রায় ঘোষণা করেন।
তেজগাঁও থানার মামলা
রাজধানীর তেজগাঁও থানার নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিএনপির সাত কর্মীর আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারক রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও সাত মাসের কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন—সাজেদুল ইসলাম সুমন, গান্ডু শাহিন, বেল্লাল হোসেন, জাকির হোসেন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও আবু বক্কর সিদ্দিক।
নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের মে মাসে বিএনপির হরতাল অবরোধ চলাকালে রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ ঢাকার সিএমএম বিএনপিনেতা নীরবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পরে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪৩৫ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন