ডেস্ক রিপোর্ট :
বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা মাল্টার একটি মালবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ভারতীয় নৌ বাহিনী। এ সময় ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র এসব কথা জানান। ছিনতাই করা এই জাহাজটি নিয়ে গত তিন মাস ধরে ভারত মহাসাগরে ঘুরে বেড়াতো সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) নিজেদের পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
পোস্টে বলা হয়েছে, মাল্টার পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েন নিয়ে জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী ধারণা করছে, রুয়েন থেকেই বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ আব্দুল্লাহতে হামলা চালিয়েছিল জলদস্যুরা। মহাসাগরে এই জাহাজটিকে ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে তারা অন্যান্য জাহাজে হামলা চালাত।
ভারতের নৌবাহিনী জানিয়েছে, রুয়েন জাহাজটিতে অভিযান চালানোর সময় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে জলদস্যুরা। তবে অভিযান শেষে জাহাজে থাকা সব নাবিককে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে।
জাহাজটিতে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক আছে কি না তাও পরীক্ষা করা হয়েছে।
রুয়েন নামের এই জাহাজটি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ছিনতাই করা হয়। শুক্রবার জাহাজটিকে আটকের কথা জানায় নৌবাহিনী। এর আগে নজরদারি করার জন্য একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধজাহাজ থেকে। জলদস্যুরা সেটি লক্ষ্য করে গুলি করে।
ওই অভিযানের বেশি কিছু ছবি ও ভিডিও নিজেদের এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এই সপ্তাহের শুরুতে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলে এই জাহাজটিরই সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী।
এর আগে এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের নিরস্ত করতে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর ক্র্যাকডাউন শুরু করে। ফলে কমে যায় জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা।
২০১৭ সালের পর রুয়েনই প্রথম জাহাজ কোনো জাহাজ যেটি সোমালি জলদস্যুরা সফলভাবে ছিনতাই করতে পেরেছিল। এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে সোমালি জলদস্যুরা। কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকে আবারও শুরু হওয়া আক্রমণের আগ পর্যন্ত তারা প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল।
এই মুহূর্তে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের আক্রমণের দিকে বেশি নিবিষ্ট রয়েছে পশ্চিমা শক্তি। ফলে লোহিত সাগরের পূর্বদিকে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিতে অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত।
এর আগে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, পয়লা ডিসেম্বর থেকে অন্তত ১৭টি ছিনতাই, ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
ছিনতাই হওয়া এমভি আব্দুল্লাহর সর্বশেষ
২৩ নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বাংলাদেশি জাহাজটির অবস্থান বারবার বদল করছে জলদস্যুরা। গত মঙ্গলবার জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নেয়ার পর নোঙর করার পরও অন্তত তিনবার স্থান বদলেছে এমভি আব্দুল্লাহ। জলদস্যুরা বর্তমানে জাহাজটিকে সরিয়ে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলে নোঙর করেছে।
জাহাজটির মালিকপক্ষ ধারণা করছে, জলদস্যুদের যে গ্রুপটি জাহাজটি ছিনতাই করেছে তারা হয়তো ছোট একটি গ্রুপ। তারা কিছু টাকা পয়সার বিনিময়ে এটি বড় গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করবে। সেই গ্রুপই মুক্তিপণ নিয়ে দেন দরবার করবে। হয়তো এ কারণেই জলদস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগে দেরি হচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন।
জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে স্যাটেলাইট ইমেজ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটির সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)।
সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী শনিবার বলেন, “বৃহস্পতিবার জাহাজটি যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখান থেকে আজ ৪৫-৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তর দিকে সরিয়ে নেওয়া হয় শুক্রবার। বর্তমানে জাহাজটির অবস্থান সোমালিয়ার গদবজিরান শহর থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে।”
এদিকে, ওই জাহাজটিতে থাকা সশস্ত্র জলদস্যুদের একটি ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ভারতীয় নৌবাহিনীর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) চার জলদস্যুর সশস্ত্র অবস্থানের ওই ছবি প্রকাশ করা হয়।
শুক্রবার সন্ধার পর জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে তাদের পরিবারে সদস্যরা জানিয়েছেন।
জাহাজটিতে জিম্মি চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই মোহাম্মদ আসিফ খান শনিবার বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোন দিয়ে কল করেছিল ভাইয়া। তখন দেড় মিনিটের মতো কথা হয়েছে। এরপর আর আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’