বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

বন্ধু, বন্ধুর স্ত্রী আর ইয়াবাতেই সব শেষ

বন্ধু, বন্ধুর স্ত্রী আর ইয়াবাতেই সব শেষ

খুনের শিকার তরুণ সাখাওয়াত হোসেন ফাহিম ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত মো. আরিফ দুজনই ইয়াবা আসক্ত। ইয়াবার হাত ধরে ২১-২২ বছরের দুই তরুণের জীবনেই ঘটে সর্বনাশ। স্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় প্রতিদিনের ইয়াবাসঙ্গী ফাহিমকে জবাই করে হত্যা করে বন্ধু আরিফ। আরিফকে উদ্ধৃত করে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে নগরের চকবাজার থানার ডিসি রোডে একটি বাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংক থেকে শাখাওয়াত হোসেন ফাহিমের (২১) গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে ভোলা জেলার রতনপুর গ্রাম থেকে অভিযুক্ত মো. আরিফকে (২২) গ্রেফতার করে চকবাজার থানা পুলিশের একটি দল।

আরিফ নগরের চকবাজার থানার ডিসি রোডের শদি কমিশনারের গলির খোকন হেনজা ওরফে আব্দুর রহমানের ছেলে। নিহত শাখাওয়াত হোসেন ফাহিম ডিসি রোডের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

ফোনকলের সূত্র ধরে খুনিকে শনাক্ত

২০ আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন ফাহিম। নিজেদের মধ্যে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ফাহিমের বাবা আনোয়ার হোসেন ২২ আগস্ট চকবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে নগরের চকবাজার থানার ডিসি রোডে একটি বাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংক থেকে ফাহিমের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনা তদন্তে নেমে প্রথমেই নিহত ফাহিমের মোবাইল নম্বর ধরে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে খুনির পরিচয়।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘ফাহিমের শরীরে সুরতহাল করতে গিয়ে ছুরির একাধিক জখম পাওয়া যায়। সন্দেহ হওয়ায় ফাহিম নেশা করত কি না-তাও তদন্ত করে দেখা হয়। এরপর ফাহিমের মোবাইলের কললিস্ট ধরে আমরা তদন্ত শুরু করি। এর মধ্যে সর্বশেষ কল করা ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে খুনিদের শনাক্ত করা গেছে।’

নগর উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ‘খুনি ছিল খুব সচেতন। ফাহিমকে খুন করার আগে বাইরের দুজনের মোবাইল থেকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনা হয়। আমরা সেই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই খুনি আরিফের পরিচয় বেরিয়ে আসে।’

রাজমিস্ত্রি বেশে খুনিকে গ্রেফতার

খুনি মো. আরিফের বাড়ি চকবাজার থানার ডিসি রোডে হলেও খুনের পরপরই পালিয়ে গিয়েছিলেন ভোলায় খালার বাড়ি। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের একটি দল যায় ভোলায়। খুনি আরিফকে গ্রেফতার অভিযানের মুহূর্তগুলো বিস্তারিত জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবছার উদ্দিন রুবেল।

তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ২৪ তারিখই খুনি আরিফের বিষয়ে জানতে পারি। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় খুনি আরিফের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এর পরপরই ২৫ আগস্ট পাঁচ সদস্যের একটি দল নিয়ে ভোলার রতনপুর গ্রামে পৌঁছি।’

‘শুরুতে রতনপুরে চট্টগ্রামের বা চট্টগ্রামে যাওয়া আসা আছে-এমন কে আছে খোঁজ নেয়া হয়। একপর্যায়ে জানতে পারি আরিফের খালুর কথা। যিনি চট্টগ্রাম থেকে বিয়ে করেছেন। আমরা আরও জানতে পারি, আরিফের খালু মোতাচ্ছিন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তখন আমরাও নিজেদের রাজমিস্ত্রি বেশ নিয়ে মোতাচ্ছিনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সারাদিন কথা বলার একপর্যায়ে তিনি আমাদের জানান, চট্টগ্রামে তার আসা যাওয়া আছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা তার এক আত্মীয় বর্তমানে রতনপুরের বাসায় অবস্থান করছেন। পরে বিকেলেই অভিযান চালিয়ে আরিফকে গ্রেফতার করা হয়।’

ইয়াবায় সর্বনাশ

ফাহিম হত্যাকাণ্ডের সবিস্তর বর্ণনা দিয়েছেন নগর উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। আজ দুপুর দেড়টার দিকে তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের বীজ গাঁথা হয়েছিল ইয়াবা দিয়ে। যার পরিণতি গড়িয়েছে হত্যাকাণ্ডে।

তিনি বলেন, ‘খুনের শিকার তরুণ সাখাওয়াত হোসেন ফাহিম ও খুনি মো. আরিফ সমবয়সী দুজনই ইয়াবা আসক্ত ছিলেন। দুজনই একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করতেন আরিফের বাসায় বসেই। দুজনের মধ্যে আরিফ বিবাহিত। তার স্ত্রী মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আরিফ ফাহিমকে নিয়ে আড্ডা দিতেন-ইয়াবা খেতেন।’

খুনি আরিফের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব আড্ডায় ফাহিম আরিফের স্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলতেন। এমনকি তিনি আরিফের স্ত্রীকে নিজের করে পেতে চান। বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি আরিফ। তাই পরিকল্পনা করেন ফাহিমকে হত্যার।’

‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ আগস্ট সকালে নিজের বাসা থেকে একটি কাঁথা ও কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ছুরি নিয়ে সেগুলো ঘটনাস্থল চকবাজার ডিসি রোডের আবু কলোনি রোডের আবুল কাশেমের ভাড়া ঘরের দ্বিতীয় তলায় পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকে রাখেন। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই কলোনির বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন ও শাহজাহানের মোবাইল থেকে ফাহিমকে ফোন দেন’, বলেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।

হত্যার ওই মুহূর্তের বিবরণ দিয়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফোন পেয়ে ফাহিম আরিফের বাসায় আসেন। পরে তাকে আড্ডা দেয়ার ছলে পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকের কাছে নিয়ে যান। আড্ডা দেয়ার একপর্যায়ে আগে থেকেই লুকানো ছুরি দিয়ে ফাহিমের গলায় পোচ দেন আরিফ। এরপর তার বুক, পিঠ ও পেটে বারবার ছুরিকাঘাত করে ফাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে ওইদিনই খুনি আরিফ ভোলায় তার খালার বাসায় আত্মগোপন করেন।’

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech