চরফ্যাসন:
ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় গভীর সাগরে দুই লক্ষাধিক জেলে ইলিশ শিকারে করছেন। হাটবাজার, মৎস্য অবতরন কেন্দ্র গুলোতে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসছে। মৎস্যঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে ইলিশে দেখা পেয়ে জেলে, ক্রেতা ও বিক্রেতা খুবই খুশি। ইলিশ পড়লে দাম কিন্তু কমেনি। ইলিশ মোকাম করতে জেলেপল্লীতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে সাগরে ইলিশ শিকার করতে গিয়ে ভোলার চরফ্যাশনের ২৯জেলে নিখোঁজের ৫দিন পর ২জন জীবিত ও সাত জনের মৃত লাশ পাওয়া গেছে। বাকি ২০জন নিখোঁজের প্রায় ২মাস হলেও এখনোও খোঁজ মিলেনি। আতংকে থেকেও জেলেরা জীবনের ঝুকি নিয়ে সেই সাগরে মাছ শিকার করতে ছুটে চলছে। বৈরি আবহাওয়া টানা বর্ষণ হলেও সাগরে মাছের ভাল সংবাদ পেয়ে দলে দলে জেলেরা নদীতে যাচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাবে বলে মৎস্য কর্মকর্তার মনে করেন। জেলে খোরশেদ আলম বলেন নদী একটু উত্তাপ। সাগরের ঝাকে ঝাকে ইলিশ ঘুরছে। কেউ ইলিশের চাঙ্গার মধ্যে জাল পালাতে পারলে একটানে(একখেয়ে)প্রায় ২/৩টাকার টাকার মাছ ধরছে। আমরাও ৩দিনে(একগইন)দিয়ে প্রায় ৩লাখ টাকার মাছ শিকার করছি। তবে ৭০/৮০হাজার টাকার মত খরচ হয়।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গবেষণা অনুযায়ী মা ইলিশ ডিম দেয় নদীতে। তাই সমুদ্রের ইলিশ তার প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। তাই প্রতি বছর ১২অক্টোবর থেকে ২নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। এর পর ৩০ জুন পর্যন্ত ৮মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকে।
তবে এবার প্রথমবারের মতো সাগরে মাছের প্রজনন, প্রজননের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, প্রজননের পরে ডিম, রেণু, ছোট মাছের নিরাপত্তা, বেড়ে ওঠার সুযোগ ও সাগরে মৎস্য সম্পদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০মে থেকে ৬৫ দিন ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তাই ২২ জুলাই থেকেই ইলিশের সন্ধানে পাল্লাদিয়ে দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ শ্কিার করছে।
মৎস্য ভবন সূত্র জানায়, ভোলা জেলায় সর্বোচ্চ এক লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জেলে রয়েছেন। এদের মধ্যে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভোলার এক লাখ ৭৭ হাজার জনকে সরকারি প্রণাদনার অংশ হিসেবে প্রতি জনকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলে অনেকে চাল না পেয়ে এবং অনেকে ১০কেজি পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেরা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম বলেন মূলত মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির জন্যই সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে সাগরে ৬৫ দিন ইলিশ শিকার নিষেধ ছিল। ফলে সাগরে ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা আশাবাদী। তা ছাড়া পূবের থেকে জেলেরা অনেক সচেতন। তাদের সচেতনতার কারণেই সাগরে মৎস্যসম্পদ ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আবহাওয়া এবং সর্তক সংকের উপর বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে। দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ (৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন) ইলিশ আসছে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার অধীনস্ত নদী ও সাগর থেকে। তিনি বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে এ বছর দক্ষিণাঞ্চলে সাগর ও নদীতে ইলিশের প্রবৃদ্ধি পূর্বের তুলানায় অনেক হবে।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা মারুপ হোসেন মিনার বলেন,ভোলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেলে রয়েছে চরফ্যাশন উপজেলা। যার মধ্যে সিংহভাগ জেলে সাগরে ইলিশ শিকারে যায়। তবে চরফ্যাশনের এখন ২০ জেলে নিখোঁজ পরিবারগুলোর কান্না ধামেনি। আমরা সহযোগীতার চেস্টা করছি। জেলেরা নদীতে যাইতে হলে সর্তকতার সহিত লাইফ বয়া, জ্যাকেট সঙ্গে নিতে হবে বাধ্যতা মূলক।
এরই মধ্যে নদী এবং সাগরে রাজা ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এর কারণ সচেতনতা এবং সরকারের যুযোপযোগী উদ্যোগ। নদী ও সাগরে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে শুধু সরকার লাভবান হচ্ছে না। মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির কারণে জেলেদেরও এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই আইন মেনে মাছ ধরলে দেশের মৎস্যসম্পদ বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।