কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
কলাপাড়ায় প্রানী সম্পদ কার্যালয় থেকে সাধারন মানুষের সরকারী সেবা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগী মানুষ তাদের গৃহপালিত হাঁস, মুরগী ও গবাদি পশুর চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমনকি প্রতিনিয়ত রোগ শোকে গৃহপালিত পশু সম্পদের মৃত্যু হলেও যথাযথ চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়া দুর্লভ হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ সরকারী ভাবে ঔষধ সরবরাহ থাকলেও অফিসের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংঘবদ্ধ হয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে এসব ঔষধ উচ্চ মূল্যে বিক্রী করে দিচ্ছে শহরের ক’টি ভ্যাটেনারী ফার্মেসীতে। এতে সাধারন মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু সম্পদের চিকিৎসা নিয়ে প্রানী সম্পদ অফিস বিমূখ হয়ে পড়ছেন। এনিয়ে উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসার বললেন বিষয়টি তিনি অবগত নন। কেউ অভিযোগও করেনি কখনও। এখন অবগত হয়ে বিষয়টি তিনি দেখবেন। এছাড়া কর্মকর্তা, কর্মচারী সংকটে সেবা দিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন তিনি।
জানা যায়, উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিস থেকে সাধারন মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু সম্পদের রোগ চিকিৎসায় সরকারী নাম মাত্র মূল্যে ভ্যাকসিনেশন সংগ্রহ, ফ্রি চিকিৎসা সেবা, মাঠ পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সুবিধা, কৃত্রিম প্রজনন সেবা সুবিধা পাওয়ার দাবীদার। মুরগীর প্রতিটি রানী ক্ষেত ভ্যাকসিনের সরকারী মূল্য ১৫ টাকা, বসন্ত ৪০ টাকা, কলেরা ৩০ টাকা, হাঁসের প্রতিটি কলেরা ভ্যাকসিন ৩০ টাকা, ডাক প্লেগ ৩০ টাকা। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলের ছরকা ভ্যাকসিন ৫০ টাকা, বাদলা ৩০টা, গলাফুলা ৩০ টাকা, খুরা রোগ ১৬০ টাকা এবং গোট পক্স ১৫৫ টাকা সরকারী নির্ধারিত মূল্য থাকলেও অফিসে প্রায়শ:ই সরবরাহ শেষ বলা হলেও বাইরের কয়েকটি ফার্মেসীতে পাওয়া যাচ্ছে এসব ভ্যাকসিন।
উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র মানুষ পশু সম্পদ পালন করে যাতে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠতে পারে এ লক্ষে নানাবিধ প্রকল্প গ্রহন করেছে সরকার। এলডিডিপি প্রকল্পের অধীনে উপকূলীয় এলাকার হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে প্রশিক্ষন শেষে হাঁস, মুরগী, ভেড়া ও প্রতিপালনের শেড সরবরাহ করা হচ্ছে। কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর, ধানখালী, লালুয়া, ধূলাসার, লতাচাপলি ও মহিপুর এলাকায় ইতোমধ্যে প্রশিক্ষন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রশিক্ষন শেষে এক এক জনকে বিনামূল্যে ২০টি হাঁস অথবা ২০টি মুরগী কিংবা দু’টি ভেড়া সহ পশুর আবাসন শেড সরবরাহ করা হবে।
এদিকে কলাপাড়া প্রানী সম্পদ অফিসের ক’জন অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম ও কর্তব্য কাজে অবহেলার কারনে পশু সম্পদ প্রতিপালন ও রোগ শোকে চিকিৎসা সেবা সহ সরকারী ঔষধ প্রাপ্তি দুর্লভ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে সাধারন মানুষ তাদের পশু সম্পদ প্রতিপালন ও রক্ষায় প্রানী সম্পদ অফিস বিমুখ হয়ে ভিড় করছে ভ্যাটেনারী ফার্মেসী গুলোতে। এতে সরকারী উদ্দোগ ভেস্তে গেলেও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে ক’জন অসৎ কর্মকর্তা, কর্মচারী।
কলাপাড়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের কার্য সহকারী মো: শামসুল আরেফীন শাকিল (৩৬) জানান, ’গত ৭জানুয়ারী মঙ্গলবার তিনি হাঁসের কলেরা ভ্যাসসিনের জন্য প্রানী সম্পদ অফিসে গিয়ে ভ্যাকসিন না পেয়ে ফিরে এসেছেন। অথচ সরকারী সরবরাহের ওই কলেরা ভ্যাকসিন তার এক ফার্মেসী মালিক নিকট আত্মীয়’র মাধ্যমে উচ্চমূল্যে পাওয়া যাবে মর্মে নিশ্চিত হয়েছেন।’
উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের মাসুদা বেগম তার গৃহপালিত ৫০টি হাঁসের জন্য প্রানী সম্পদ অফিসে গিয়ে কলেরা ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে গিয়েও কোন ভ্যাকসিন নেই বলে অফিস জানিয়েছে। যথা সময়ে ঔষধ পেয়ে হাঁসের চিকিৎসা করতে না পারায় ইতোমধ্যে তার ৪/৫টি হাঁস মারা গেছে।
পৌরশহরের এতিমখানা এলাকার রওশনা বেগম জানান, তার ৩/৪টি গরু আছে। সম্প্রতি একটি গরু পক্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সে প্রানী সম্পদ অফিসে যান। কিন্তু অফিস থেকে তাকে একটি কাগজে ভ্যাকসিনের নাম লিখে নির্দিষ্ট ফার্মেসীতে যেতে বলেন একজন।
এদিকে একাধিক কৃষক অভিযোগ করেছেন তাদের গৃহপালিত পশু সম্পদের চিকিৎসা ও ঔষধ সেবায় প্রানী সম্পদ অফিস তাদের কোন কাজে আসছেনা। মাঠ পর্যায়ে কোন মাঠ কর্মী পাওয়া যাচ্ছেনা। এমনকি অফিসে এসে সরকারী সরবরাহের স্বল্প মূল্যের ঔষধ ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। ফ্রি-চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রানী সম্পদ অফিসের কানেকশনে থাকা ক’জন ভ্যাটেনারী ফার্মেসী মালিক আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।
উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ’বিষয়টি তিনি অবগত নন। কেউ অভিযোগও করেনি কখনও। এখন অবগত হয়ে বিষয়টি তিনি দেখবেন। এছাড়া উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসে ১১ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী থাকার কথা থাকেলেও মাত্র ৪ জন আছে। এতে জনবল সংকটে সেবা দিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন তিনি।’
জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ’চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া জনবল সংকটে সেবা ব্যহত হচ্ছে। অফিসের ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রী করার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।’