চাঁদরাতে মেহেদি দিয়ে হাত রাঙাতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর দুই ধর্ষকের লাশ দেখে খুশিতে কেঁদে ফেললেন স্কুলছাত্রীর বাবা। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুই ব্যক্তি স্কুলছাত্রী গণধর্ষণ মামলার প্রধান দুই আসামি ছিলেন।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সৈয়দ আহম্মেদের ছেলে আল আমিন (২৫) ও কামাল মিস্ত্রির ছেলে মঞ্জুর আলম (৩০)।
স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার দুইদিন পর ভোলা সদর উপজেলায় মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেন তারা।
খবর পেয়ে বুধবার সকালে ভোলা সদর হাসপাতালে ছুটে যান সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের চরসিপলি গ্রামের বাসিন্দা গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা কৃষক মো. হানিফ।
এ সময় মর্গে ধর্ষকদের লাশ পড়ে থাকতে দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলেন কৃষক হানিফ। মেয়েকে ধর্ষণকারী দুই ধর্ষকের লাশ নিজের চোখে দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হানিফ বলেন, মনে অনেক শান্তি পেলাম। পুলিশকে অনেক ধন্যবাদ।
হানিফ আরও বলেন, সকালে খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে ছুটে আসি। দুই ধর্ষকের লাশ দেখে আমার মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যারা আমার মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে আমি তাদের এভাবেই শেষ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে তার সঠিক বিচার পেয়েছি আমি। ধর্ষকদের এভাবেই শাস্তি হওয়া উচিত।
ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছগির মিয়া বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে আমরা গোপনে সংবাদ পাই সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রাজাপুর এলাকায় নদীর পাড়ে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলছে দুই ডাকাত গ্রুপের। খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যাই আমরা। তখন আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায় ডাকাতদের দুই গ্রুপ। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। ত্রিমুখী ‘বন্দুকযুদ্ধের’ একপর্যায়ে দুইজন নিহত হয়। তখন ট্রলার নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, আট রাউন্ড গুলি ও দুটি রামদাসহ গুলিবিদ্ধ দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই তাদের লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
ওসি আরও বলেন, আমরা নিহতদের পরিচয় জানতাম না। বুধবার সকালে চরসামাইয়া ইউনিয়নের চরসিপলি গ্রামের কৃষক মো. হানিফ ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে নিহতদের লাশ শনাক্ত করেছেন। একই সঙ্গে হানিফ জানিয়েছেন নিহত দুই ব্যক্তি তার মেয়ের ধর্ষক। এর মধ্যে একজন আল আমিন অপরজন মঞ্জুর আলম। চাঁদরাতে মেহেদি দিয়ে সাজতে গিয়ে তাদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চরসিফলি গ্রামের এক কৃষক ঈদ উপলক্ষে তার আদরের দুই মেয়ের জন্য বাজার থেকে মেহেদি কিনে আনেন।
রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে তাদের বাবা গরু বিক্রি করার টাকা আনতে ভোলা শহরে যান। বাবা শহরে চলে যাওয়ার পর দুই বোন রাত ৮টার দিকে প্রতিবেশী দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মাহফুজের স্ত্রীর কাছে হাতে মেহেদি দিয়ে সাজতে যায়। ওই সময় আগে থেকে অপেক্ষমাণ মাহফুজের ঘরের ভাড়াটিয়া আল আমিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রীকে ডেকে তার ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় আলমিনের স্ত্রী ঘরে ছিল না। এ সুযোগে ওই ছাত্রীকে আলামিন ও তার সহযোগী মঞ্জুর আলম হাত-পা ও মুখে কাপড় বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গোপনাঙ্গে থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় পরে ওই ছাত্রীকে সোমবার ঈদের দিন বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ( শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়।