বিশেষ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগে একদিকে চলছে শুদ্ধি অভিযান আরেক দিকে আগামী কাউন্সিল ঘিরে নতুন নেতৃত্বের খোঁজ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ অঙ্গসংগঠন যুব লীগকে নেতিবাচতকতা থেকে বের করে ইতিবাচকতার ব্র্যান্ডে যুক্ত করতে চান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজেই পরিচালনা করছেন শুদ্ধি অভিযান। আসছে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের দিনখন ঠিক করে দেয়ায় সবার দৃষ্টি এখন যুবলীগে। রাজনীতি পাড়ার মানুষদের সাথে সাধারণ মানুষদেরও কৌতূহলের শেষ নেই। সংগঠনটির এই ক্রান্তিকালে কারা আসছেন নেতৃত্বে? পাঠকদের জন্য সে খবরই তুলে ধরা হচ্ছে- এখন পর্যন্ত পত্র-পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতদূর জানা গেছে এবং যাদের নাম সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে যেখানে শেখ পরিবারের শেখ মারুফ, ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এবং মাশরাফির নাম থাকছে আলোচনায়। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে যুবলীগের নেতৃত্বে আসবেন এদের থেকেই। কে আসবেন শীর্ষ পদে সে বিষয়ে আগাম বলার কোন সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত অবশ্যই আসবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার তরফ থেকে। কার সম্ভাবনা কতটুকু সে বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোকে বিতর্কমুক্ত রাখতে। সে লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্বকে। যুবলীগের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার বয়সকেও একটা মানদন্ড ধরা হতে পারে। বিশ্বের শীর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশেই দেশগুলোর যুব রাজনৈতিক ইউনিটগুলোর জন্য বয়সের একটা নির্দষ্ট ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপির যুব ইউনিট যথাক্রমে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা ও ভারতীয় যুব কংগ্রেস এর বয়স সীমা ১৮-৪০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুব রাজনৈতিক ইউনিটে বয়সের বাধ্যবাধকতা একই অর্থাৎ ১৮-৪০। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে আরও কম। দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির যুব সংগঠনের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। কানাডায় সেটা আরও কম তারা জাতিসংঘকে অনুসরণ করে দেশটির যুব রাজনৈতিক সংগঠনের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছেন মাত্র ২৫ বছর। বাংলাদেশের যুবনীতি অনুসারে তরুণ বা যুবকদের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। সেখানে ষাঠোর্ধ্ব কাউকে যুবলীগের নেতৃত্বে দেখা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল যুবলীগের একাধিক নেতা কর্মী। বয়স ও ক্লিন ইমেজকে মাপকাঠি ধরা হলে নেতৃত্বের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। বর্তমানে যুবলীগের কার্য নির্বাহী সদস্য তৃণমূলেও তমুল জনপ্রিয়। যুব লীগের শীর্ষ নেতাদের মাঝে হাতে গোনা যে কয়জন নেতাকে দুর্নীতি ও অপকর্ম কখনও স্পর্শ করতে পারেনি তাদের একজন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। এরপরেই সম্ভাবনার কথা বললে এগিয়ে থাকবেন শেখ মারুফ। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির ছোট ভাই হিসেবে সম্ভাবনা সবার থেকে তারই বেশি ছিলো। কিন্তু বয়স হয়ে গেছে ৬৭ বছর। বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মারুফের সামনে তাই বয়সকেই বাধা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এছাড়া যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের নামও চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। মির্জা আজম তৃনমূলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যদিও তিনি তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন। বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই প্রতিমন্ত্রী এমনিতেই অনেক বড় দায়িত্বে আছেন- যে কারণে নতুন করে আর কোন বড় দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন তার জন্য। অন্যদিকে তার বয়সও হয়ে গেছে ৫৭ বছর। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি নির্ধারক বলছেন যে, একজন ভালো সংগঠক হওয়ার চেয়ে একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব যুবলীগের ভাবমূর্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার নামও এক্ষেত্রে আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যেখানে সংগঠন তৈরি করা কঠিন নয়। দল শক্তিশালী এবং শতভাগ সংগঠিত। কাজেই সংগঠন এমনিতেই শক্তিশালী হবে কিন্তু যিনি নেতৃত্বে থাকবেন তার ইমেজ এবং আকর্ষণ সন্দেহাতীতভাবে বিতর্কমুক্ত হতে হবে। সেই বিবেচনায় মাশরাফির নামও জোরেশোরে আলোচনায় আসছে।কিন্তু যুবলীগের কোন পদে না থেকে হুট করে এত বড় সংগঠন সামলাতে পারবেন কি না – এ প্রশ্ন অনেকেরই। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাতে বছরের শুরুর দিকে বলা হয়েছে জেলা, উপজেলায় আগামীতে দলের শীর্ষ পদে থেকে জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না।তাই যারা বর্তমানে সংসদ সদস্য তাদের যুবলীগের শীর্ষপদে আসার সম্ভাবনা ক্ষীন। আলোচনায় থাকা ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই সংসদ সদস্য। যারা হলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, মির্জা আজম এবং মাশরাফি। তবে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত কে হবেন সে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আসছে সম্মলেন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে রাজনীতি পাড়ার কৌতূহলী মানুষগুলোকে।