ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের শাহ আলম হাওলাদার মাল্টা চাষ করে তিন বছরেই সফলতার মুখ দেখেছেন। টেলিভিশনে পিরোজপুর জেলার মাল্টা চাষের উপর প্রখ্যাত কৃষিবিদ শাইখ সিরাজ এর প্রতিবেদন দেখে তিনি মাল্টা চাষে আগ্রহী হন।
শাহ আলম হাওলাদার ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন এবং পৈত্রিক সূত্রে ও ক্রয় সূত্রে প্রাপ্ত ৭ বিঘা জমিতে মাল্টাসহ নানাবিধ ফলের চারা রোপন করে যাত্রা শুরু করেন।
তার বাগানে মাল্টার পাশাপাশি রঙিন আমসহ ৮০ জাতের দেশি-বিদেশি আম, সৌদি আরবের খেজুর, মিষ্টি কমলা ও দিনাজপুরের লিচু আবাদ করা হয়। তবে মাল্টার উপর তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন, ফলে এক্ষেত্রে তিনি প্রভূত সফলতা অর্জন করেছেন।
ফল চাষি শাহআলম জানান, তার বাগানে বারি মাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা), থাইল্যান্ডের বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রচলিত মাল্টা, এই তিন জাতের মাল্টা চাষ করে থাকেন। চারা রোপনের দুই বছরের মধ্যে গাছের ফলন শুরু হলেও মূলতঃ তিন বছরে একটি গাছে পূর্নাঙ্গ ভাবে ফল ধরা শুরু করে। তিন বছর বয়সী একটি গাছে প্রতি মৌসুমে ৪ শত থেকে সাড়ে ৪ শত মাল্টা ধরে বলে তিনি জানান।
এ বছর তিনি এ রকম ফলন পেয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে গোটা নলছিটি উপজেলা, পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলা ও বরিশাল শহরের ফলের বাজার সমূহে পৌঁছে গেছে। দূর-দুরান্তের ফল ব্যবসায়ীরা তার বাগানের মাল্টা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। ঢাকায় বসবাসরত এলাকার উচ্চপদস্থ সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবিগণ ও শিল্পপতিরা তার মাল্টা কিনে নিয়ে যান। ফলের বাগান তৈরির শুরুতে শাহ আলমের স্ত্রী রোকসানা পারভীন স্বামীর ভালো চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে ফলচাষের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখাতেন না, আপত্তি জানাতেন। কিন্তু এখন সফলতা দেখে তিনি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এবং ঘড় সংসারের পাশাপাশি স্বামীর মাল্টা বাগানেও কাজ করেন।
তাদের একমাত্র মেয়ে স্কুল পড়ুয়া মেধাবী ও সংগীত প্রিয় শারিনা তাছরিন ইভার নামে শাহ আলম তার বাগানের নাম রেখেছেন ‘শারিন মাল্টা গার্ডেন ও নার্সারী’। এই ছোট্ট মেয়েটিও বাবা মায়ের সাথে মাল্টা বাগানে সহযোগীতা করে। শাহ আলম তার বাগানে নানা জাতের ফলের চারা তৈরি করে বিক্রি করেন। নিজের বাগানে মাতৃগাছ থেকে ‘ছায়ন’(বাকল) দিয়ে ‘গ্রাফটিং’ করে চারা উৎপাদন করেন। নলছিটি কৃষি অফিসও তার বাগান থেকে চারা কিনে নিয়ে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে থাকে।
শাহআলম কৃষি অফিসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখেন। কৃষি অফিস তাকে পরামর্শ ও আধুনিক কৌশল প্রয়োগের জ্ঞান দিয়ে থাকে। সরকারি সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বল্পসুদে বা বিনাসুদে ব্যাংক ঋণ পেলে শাহ আলম হাওলাদার তার মাল্টা বাগানকে আরও বৃহত্তর পরিসরে ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত জাতের মাল্টা ব্যাপক ভাবে উৎপাদন করে সারা দেশে বাজারজাত করে তার শারিনা মাল্টা গার্ডেন ও নার্সারীকে সুপরিচিত ও সকলের কাছে পৌছে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন।