পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী সদরে অবস্হিত রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অমান্য করে দুইজন সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী বিতর্কিত শিক্ষক সাজেদা বেগমকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ অহিদুল আলম ও প্রবীর চন্দ্র রায় অভিযোগে বলেন গত ৪ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান চাকরি থেকে অবসরে চলে যান। বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকার কারনে সরকারি বিধিমোতাবেক এক নম্বর সিনিয়র শিক্ষকের প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবার কথা কিন্তু দুইজন সিনিয়র শিক্ষক ডিঙ্গিয়ে তৃতীয় শিক্ষক সাজেদা বেগমকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সাজেদা বেগম বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুজ্জামান মামুনের স্ত্রী।
শিক্ষক সাজেদা বেগমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে মাসের পর মাস ঢাকায় স্হায়ীভাবে বসবাস, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের হয়রানি অভিভাবকদের উপর স্বামীর ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হামলার অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুটি অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
গত ১৮ মার্চ থেকে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস কোভিড ১৯ এর সংক্রামক থেকে বাঁচতে দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এর মধ্যে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্যদের অনুপস্থিততে সভা করে সাজেদা বেগমকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন আমি চাকরি থেকে অবসর গ্রহন করেছি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা পরিচালনা পর্ষদের ইখতিয়ার তারা তাদের মত করে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জাহিদুল হাসান কবির তালুকদার বলেন এব্যাপারে অধিকাংশ সদস্য কিছুই জানেন না। শিক্ষক সাজেদা বেগমের মামা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ভুঁইয়া ফরিদ উদ্দীন বলেন আইন থাকলেই তা মানতে হবে সেটা কোথায় লেখা আছে পরিচালনা পর্ষদ স্কুল পরিচালনা করে তারা যাকে ভাল মনে করেছেন তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিদ্যোৎসাহী সদস্য সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেকের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন নীতিমালা থাকলে বাস্তবতার কারনে অনেক সময় তা পালন হয়না, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমস্ত পরিবেশ সাজেদা বেগমের পক্ষে তাই শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে সাজেদা বেগমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন দেখেন বাস্তবতা তো বোঝেন আমি বৃদ্ধ মানুষ আমাকে কেন বিপদে ফেলছেন।
শিক্ষক প্রতিনিধি গৌরি শংকর দাসের কাছে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন সভাপতি সকল শিক্ষককে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেছেন দুইজন শিক্ষক বাদে সবাই স্বাক্ষর দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকর দায়িত্ব কে পাবেন এটা আইনে নির্ধারিত আছে তবে এখানে কোন দিনও কোন আইন মানা হয়নি এবার এর ব্যতিক্রম কেন হবে? এব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন স্পষ্ট পরিপত্র রয়েছে কোন অবস্হাতেই সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবেনা। রাঙ্গাবালী মডেল স্কুলের ঘটনাটা আমি মোখিকভাবে শুনেছি ছুটির পর অফিস খোলা হলে এব্যাপারে কাগজপত্র পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন জানান মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অমান্য করা মানে রাষ্ট্রের আইন অমান্য করা।
যদি কেউ দায়িত্বে থেকে রাষ্ট্রের আইন ভংগ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন রাঙ্গাবালি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি অভিযোগ তদন্তধীন রয়েছে, তাছাড়া এর আগে একজনকে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আবারও নতুন করে তাদের এসব করা ঠিক হয়নি আর কাউকে দায়িত্ব দিলেই তো হলনা সেটা আইনসিদ্ধ হতে হবে।
এব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ( মাধ্যমিক শাখা) দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ আইন ভাঙ্গার জন্য নয় আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষে দায়িত্ব পালন করে যদি প্রমাণিত হয় মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অনুয়ায়ী দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।