প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের লকডাউন ঘোষনা উপেক্ষা করে মদ বিক্রি করেছে বরিশাল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। আর জনসমাগম করে মদ বিক্রি করার ছবি তুলতে গিয়ে ওই দপ্তরের কর্মচারীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বাংলা ভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সন কামাল হাওলাদার। ভাঙচুর করা হয়েছে তার ক্যামেরা ও মোবাইল। এই ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলবাহিনীর সদস্যরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে উপস্থিত হয়। এসময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমানের রুম আটকে দিয়ে তাকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী উপস্থিত হয়েই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ১টি কন্টিনার ভর্তি মদ ফেলে দেয়া হয়। যাতে ৮/১০ লিটার মদ ছিলো। পাশাপাশি ১৮০ লিটার মদ অধিদপ্তরের একটি কক্ষে আটকে তা সীলগালা করে দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল থেকে বরিশাল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কার্যালয়ের মধ্যে প্রায় দেড়শ লোক জড় করে মদ বিক্রি করছিলো দপ্তরটি। ৮৬ টাকা মূল্যের ১ লিটার মদ তারা ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে বিক্রি করছিলো। সেখানে উপস্থিত ৪/৫ জনের কাছে লাইসেন্স থাকলেও বাকি দেড়শ লোকের কোনো লাইসেন্স ছিলো না। লাইসেন্স বিহীন এসব লোকদের কাছে অতিরিক্ত দামে লকডাউন উপেক্ষা করে এবং জনসমাগত তৈরী করে কেরু কোম্পানীর মদ বিক্রি করছিলো। তবে তাদের কাছ থেকে নগদ নয় পূর্বে প্রায় ৭ লাখ টাকা জমা নেয় দপ্তরের কর্মকর্তারা। তারপর মদ বিক্রি শুরু করে। এসময় ঘটনার চিত্র বাংলাভিশন চ্যানেলের বরিশাল ক্যামেরাপার্সন কামাল হাওলাদার তার ক্যামেরায় ধারণ করলে তাকে প্রথমে মারধর করে ওই দপ্তরের কর্মচারীরা পরে ক্যামেরা ও মোবাইল ভাঙচুর করা হয়।
বাংলা ভিশনের স্টাফ রিপোর্টার শাহিন হাসান জানান, এই ঘটনায় বরিশাল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বরারর একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে জনসমাগম তৈরী করে মদ বিক্রি করা হচ্ছিলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মধ্যে। পিরোজপুর জেলার মদের ডিলার দিলীপ মদ ক্রয় করা সহ বরিশাল ও বিভিন্ন জেলার লাইসেন্স বিহীন ব্যক্তিদের কাছে মদ বিক্রির খবর পেয়ে মিডিয়াকর্মীরা সেখানে ছুটে যায়। এসময় কম্পাউন্ডের ভিতরে থাকা শতাধিক মাদক ক্রেতার মাদকসহ ছবি তোলার চেষ্টা করা হলে ওই কার্যালয়ের ওয়্যারলেস অপারেটর হাসিব, ড্রাইভার রাজন ও আউটসোর্স রাকিবসহ ৫/৬ জন বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন কামাল হাওলাদারের উপর হামলা চালায় এবং মারধর করে। পরে তার ক্যামেরা ও মোবাইল ভাঙচুর করে তারা।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মদ ক্রেতাদের প্রথমে সরে যেতে বললে তারা জানায় যে, তারা এখানে টাকা জমা দিয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। এখানে টাকা জমা দেয়া তাই মদ নিতে তো সমস্যা নেই। এখানকার কর্মকতারা আগেই টাকা নিয়েছে এবং অতিরিক্ত পরিচালকের কক্ষে টাকা রয়েছে।
এই বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তিনি কিছু জানেননা। তবে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে। তারা তাদের দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।