আজ ৭ই জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৭ই জুন এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিন বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও  তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ৬ দফা আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র, রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে-পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এই ৬ দফা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করে এবং ৬ দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়।

৬ দফা বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ই মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ দফার প্রতি বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ৬ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোনীত প্রার্থীদের একচেটিয়া রায় প্রদান করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে তখনই ১৯৭১-এর ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দলটি জানায়, বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণেও ৬ দফার প্রতিটি দফার পর্যালোচনা ছিল। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ও মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ৬ দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ৬ দফার ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭ই জুন ‘ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস’কে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের জনসমাগমপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে আসছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দেশবাসীকে ঐতিহাসিক ৭ই জুনের সকল বীর শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র ও প্রগতি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী দেশমাতৃকার সকল শহীদ সন্তানদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। মাতৃভূমির কল্যাণে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের পবিত্র স্মৃতি, চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বাঙালি হৃদয়ে দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে সংকট জয়ের ঐক্যবদ্ধ সুরক্ষা ব্যুহ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছে দলটি।
ওবায়দুল কাদেরের আহ্বান
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ ৭ই জুন ‘ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস’ উপলক্ষে ঐতিহাসিক ৭ই জুনের সকল বীর শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে করোনা সংকট মোকাবিলায় চলমান কর্মোদ্যোগকে আরো গতিশীল করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।