বরিশালে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর চামড়ার মান ও আকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। শনিবার বিকেলে নগরীর চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের পাইকারি বাজার পদ্মবতীসহ বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।
বেশির ভাগ এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম একেবারে কম বলায় মানুষ মাদরাসা ও এতিমখানায় চামড়া দিয়েছে। বিক্রেতারা বরিশালে পানির দরে চামড়া বিক্রির কথা জানালেও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত বছরের তুলানায় এবছর চামড়ার দাম বেশি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুঁজির স্বল্পতার কারণে চামড়ার দাম কমেছে।
বরিশালে পশুর চামড়ার পাইকারি বাজার পদ্মবতী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এ বছরে মাত্র চারজন ব্যবসায়ী পশুর চামড়া কিনছেন।
পাইকারি বাজারে সোয়া লাখ টাকার ওপরে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩৫০ টাকা ৫০০ টাকায়। ৭০ থেকে লাখ টাকার দামের গরুর চামড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছর কোরবানির পশু জবাই করার পরপরই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনতেন। চামড়া দাম দিত ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর এবছরে গরুর ও ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। বর্তমানে লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম বিগত বছরের ছাগলের চামড়া দামও পাওয়া যায় না। আর ছাগলের চামড়া তো ফ্রি, না হলে ফেলে দিতে হয়।
বাজারের চামড়ার দাম কম থাকায় বেশির ভাগ মানুষ বিনামূল্যে পাশুর চমড়া দান করেছে দরিদ্র প্রতিবেশী, এতিমখানা ও মাদরাসায়।
মাদরাসার শিক্ষক আবদুর রহমান সাববিদ বলেন, আমরা ২০টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। পাইকারি বাজারে এসে তা সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
এর মধ্যে বেশির ভাগ দানকৃত না হলে পুঁজিই ওঠানো যেত না। মৌসুমি চামড়া বিক্রেতা আনিস বলেন, চামড়া নিয়ে এসেছি নলছিটি থেকে। গরুর চামড়ার দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম দিল না। ছাগলের চামড়া দিলে ১০ টাকা ২০ টাকা দিয়ে বলে, পান-সিগারেট খাইস।
পদ্মবতী এলাকার পশুর চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল জলিল জানান, প্রতিবছর ঢাকার আড়তদারা কোরবানির আগে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করতেন। পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য আগাম পুঁজিও দিতেন। এবছর আগাম পুঁজিতো দূরের কথা বকেয়ার কানাকড়িও পরিশোধ করেননি আড়তদার। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুঁজি না পেয়ে এবার নিজের স্বল্পপুঁজিতে চামড়া কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দরে গরুর চামড়া কিনছি। এর চেয়ে বেশি দামে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের চেয়ে এ বছর চামড়ার দাম একটু বেশি দেওয়া হচ্ছে। গত বছর প্রতিপিস চামড়ায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়েছিলাম। আর এবছরে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা দিচ্ছি।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহিন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ চামড়ার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির পূর্বে কিছু টাকা ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দিলেও এবারে খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।
তাই সামান্য পুঁজি নিয়ে পাঁচজন ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত হয়েছেন। পুঁজির স্বল্পতার কারণে স্থানীয়ভাবে চামড়ার দামের ওপরে প্রভাব পড়েছে। এতে করে স্থানীয় বাজার থেকে ৩০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ কম হবে।