তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল। আসলে এই প্রার্থনার আড়ালে খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন করে বিএনপিই প্রমাণ করেছে তারা খুনিদের দল।’
রোববার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে সার্কিট হাউজ রোডে তথ্য ভবনের মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। তথ্য মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তথ্যসচিব কামরুন নাহার সভায় সভাপতিত্ব করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের সশ্রদ্ধ স্মরণে এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এতদিন ১৫ আগস্টে ভুয়া জন্মদিন পালন করেছেন খালেদা জিয়া। এরপর সেটি আর পালন না করার ঘোষণা দেয়া হয়। আবার গতকাল দেখলাম, ১৫ আগস্ট যেদিন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে, সমগ্র বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় মিলাদ হচ্ছে, হত্যাকারীদের নিন্দায় বিক্ষোভ-সমালোচনা হচ্ছে, সেখানে তারা (বিএনপি) খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির কামনায় মিলাদ মাহফিল করেছে। এই মিলাদ আপনারা ১৪ তারিখ করলেন না কেন? ১২ তারিখ বা ১৬ তারিখ করলেন না কেন?’
বিএনপির উদ্দেশে এমন প্রশ্ন করে ড. হাছান বলেন, ‘১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ করে বিএনপি আসলে তার জন্মদিন পালন করেছে, জনগণের চাপে সেটি বলতে লজ্জা লাগছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুধু জিয়াউর রহমানই যুক্ত ছিলেন না, খালেদা জিয়ারও সায় ছিল এবং তাদের দলটি হচ্ছে খুনিদের দল।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বেগম জিয়ার জন্মের বিভিন্ন তারিখের ঘটনা যদি ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রে হতো, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, সংসদ সদস্য হওয়া বা রাজনীতি করার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতো।’
ড. হাছান বলেন, ‘বেগম জিয়ার পাসপোর্টে একটা জন্ম তারিখ, বিয়ের রেজিস্ট্রারে আরেকটা, ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার সময় আরেকটা জন্ম তারিখ, শিক্ষাগত সনদে আরেকটা তারিখ। আর সবশেষে ১৯৯৫ সালে হঠাৎ পত্রিকার পাতায় দেখলাম মান্নান ভূঁইয়া ঘোষণা করলেন খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছেন। তখন থেকে সেই তারিখে তারা কেক কাটেন। একটা মানুষের কয়টা জন্ম তারিখ থাকতে পারে? এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে আর কোনো মানুষের জীবনে আছে বলে আমার জানা নেই।’
তথ্যমন্ত্রী এ সময় ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শহীদ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যা করার লক্ষ্যে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুব দ্রুত পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা আসে। আমরা দেখতে পাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো আগস্ট মাসের ১১ বা ১২ তারিখ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, এ অঞ্চলে একটি বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ হত্যাকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের যোগাযোগ ছিল। সে সময় এই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের উল্লসিত হওয়া, পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথা বলা- এই ঘটনাগুলোই বলে দেয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যার লক্ষ্যে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান যে জড়িত তা শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন মাজেদের জবানবন্দিতে নয়, বিদেশে টেলিভিশনের সঙ্গে কর্নেল ফারুকের দেয়া সাক্ষাৎকারসহ আরও বহু প্রমাণ আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে মিশনের চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জিয়াউর রহমান। ক্যাপ্টেন মাজেদের ভাষ্য অনুযায়ী যাদের বিয়ে হয় নাই তাদের বান্ধবীসহ বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জিয়া। এরপর সংসদে ইনডেমনেটি অধ্যাদেশ পাস করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। সুতরাং যারা এই পটভূমি রচনা করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন।’
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আজ থেকে শতবর্ষ পর ঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য এসব তথ্য জানা প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সেজন্যই আজকে দাবি উঠেছে একটি কমিশন গঠন করে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলব ছিল, তাদের মুখোশটি জাতির সামনে উন্মোচন করা। তাহলে আগামী ৫০০ বছর প্রজন্ম জানবে যে প্রকৃতপক্ষে একটি সদ্য স্বাধীন জাতিকে হত্যা করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।’
তথ্যসচিব কামরুন নাহার, প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম গোলাম কিবরিয়া সভায় বক্তব্য দেন। ‘স্বাধীনতা কী করে আমাদের হলো’ প্রামাণ্যচিত্রটি এ সময় মিলনায়তনের চারটি পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। তখন এক ভাবগম্ভীর আবহ তৈরি হয়। অনুষ্ঠান শেষে তথ্য ভবনের দ্বাদশ তলায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শনী গ্যালারি ও জাদুঘর এবং নিচতলায় সংস্থার প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী।