সাগরে ইলিশে সয়লাব বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার মন সাগরের ইলিশ আসছে মোকামে। হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দরপতন হয়েছে ইলিশের। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় জেলে ও ব্যবসায়ীরা খুশী হওয়ায় প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। যদিও খুচরা পর্যায়ে কম দামে ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অভ্যন্তরীন নদীর কিছু ইলিশ থাকলেও পরিমানে কম, দাম বেশী।
ইলিশ আড়তদাররা বলছেন, ভরা মৌসুম হওয়ায় ইলিশের আমদানী বেড়েছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাকী ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই কম দামে ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলে ও আড়তদারদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে ইলিশ রপ্তানি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
গত ১ সপ্তাহ ধরে ৩ থেকে ৪ হাজার মন ইলিশ আসছে মোকামে। সব শেষ গত শনিবারও প্রায় ৪ হাজার মন ইলিশ এসেছে মোকামে। এর মধ্যে নদীর ইলিশ অল্প-সাগরের ইলিশ বেশী। স্থানীয় চাহিদা মোটানোর পরও উদ্বৃত্ত থাকা ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই বরিশালে। এ কারণে দরপতন হয়েছে ইলিশের।
আড়তদার মো. জহির সিকদার জানান, শনিবার মোকামে অন্তত ৪ হাজার মন ইলিশ এসেছে। যার বেশীরভাগ সাগরের। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পরও অবশিস্ট ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একসাথে প্রচুর পরিমান ইলিশ আসায় দরপতন হয়েছে।
আড়তাদার মো. নাসির উদ্দিন জানান, দেড় কেজি সাইজের প্রতি মন ইলিশ ৩৬ হাজার, ১ কেজি ২শ’ গ্রাম সাইজের প্রতিমন ৩০ হাজার, কেজি সাইজের প্রতিমন ২৭ হাজার, রপ্তানী যোগ্য এলসি সাইজ (৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) ২০ হাজার, ভেলকা (৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম) সাইজ প্রতি মন ১৫ হাজার এবং গোটলা সাইজ ইলিশ প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকা মন দরে। সাম্প্রতিককালে এত কম দামে ইলিশ বিক্রি হয়নি বলে জানান আড়তদার মো. নাসিরউদ্দিন।
পাইকরী বাজারে ইলিশের দর পতন হলেও খুচরা ক্রেতারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রায় আগের দামেই ইলিশ কিনতে হচ্ছে তাদের।
জেলা মৎস্য আড়তদার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, এত পরিমান ইলিশ আসছে, রাখার জায়গা নেই। সংরক্ষণের জন্যও নেই কোন হিমাগার। এ কারণে কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে ইলিশ। এতে যারা সাগর-নদীতে ইলিশ আহরণ করে সেই জেলে ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছে। জেলে ও ব্যবসায়ীরা মৌসুমের এই সময়টার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে। অথচ ভরা মৌসুমে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ইলিশের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে জেলে ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের কবল থেকে বাঁচাতে অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানীর অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে ইলিশ উৎপাদন এবং আহরন বেড়েছে। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আসছে। তার আগ পর্যন্ত সাগর-নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে। এখন সাগরের ইলিশ বেশী আসছে। কয়েকদিন পর নদীতেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রচুর ইলিশ আহরিত হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের জনগণও খেতে পারছে। এটা ভালো দিক। তবে জেলে-ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মূল্য না পাওয়া দুঃখজনক। দেশীয় চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত থাকা ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা যায় কি কিনা সে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।