বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

বরিশালে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ

বরিশালে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ

নিউজ ডেস্ক:

এ যেন আচমকা ঝড়। সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। যা ধারণার বাইরে ছিল তাই হতে চলেছে। দুর্নীতি ও মাদক, সন্ত্রাসী, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান এবং জিরো টলারেন্স থাকায় সারাদেশ ব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর থাকায় গা-ঢাকা দিয়েছেন জুয়াড়ীসহ শীর্ষ মাদক কারবারীরা।

গত কয়েকদিন ধরে টানা অভিযানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে থাকা নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমান নগদ অর্থ ও জুয়ার সামগ্রী সহ গ্রেফতার হওয়ায় গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সচেতন মহল। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বাসা-বাড়ি ও ক্যাসিনো থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের পর এবার রাস্তা-ঘাটেও টাকার বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। যা সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেখা গিয়েছিল। তখন কালো টাকার মালিকগণ আইনের মারপ্যাচ এড়াতে পুকুর, পথে প্রান্তরে দামী গাড়ি (প্যারাডো) ও টাকার বস্তা ফেলে দিয়েছিলেন।

তবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও ক্লাবপাড়ায় নজরদারী এবং অভিযানের কারণে বরিশালেও জুয়াড়ীদের আনাগোনা কমেছে। এদিকে বরিশাল আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দলে জুয়াড়িদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় কাজ চলছে। আ’লীগের ছত্রছায়ায় বরিশালে যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়া ও মাদকের কারবারে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটির তৃণমূল নেতারা। এদের হাইব্রিড নামে আখ্যায়িত করে এদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর আহ্বানও জানিয়েছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতারা। সূত্রমতে, ঢাকার পর এবার বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি ক্লাবে মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান শুরু করেছে।

যেখান থেকে যুবলীগ নেতাসহ একাধিক জুয়াড়ীকে মাদক ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতারও করা হয়েছে। গত সপ্তাহেও বরিশাল নগরীর ক্লাবপাড়ায় সারি সারি মোটর সাইকেল, নামী-দামী প্রাইভেট কার দেখা যেতো। রাত যতই গভীর হতো, জুয়াড়ী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা ততোই বাড়তো ক্লাবপাড়ায়। তবে হঠাৎ করেই এমন ঝড় আসবে তা কেউ আঁচ করতে পারেননি। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর কাউনিয়া, আমানতগঞ্জ, নাজিরের পুল, বাংলাবাজার, কালুশাহ সড়ক, জেলখানার মোড়, আলেকান্দা, চাঁদমারী, নতুনবাজার, সদর রোড, পুলিশ লাইন রোড ও কাশিপুরে একাধিক ক্লাব ফাঁকা হয়ে গেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে নগরীর দুটি স্পটে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে ১৪ জনকে। নগরীর জুয়ার আসর থেকে অনেকটা গা-ঢাকা দিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগর নামধারীরা। ফলে নগরীর ক্লাবপাড়ায় এখন সুনসান নীরবতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে নগরীতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজি করে আসছিল।

দলে তাদের কোনো পদ নেই, এরা সকলেই দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপচেষ্টা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আট বছর ধরে এখানে কমিটি নেই। তাছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগ নামধারীরা বাস কাউন্টারে হামলা চালায়। কমিটি না থাকায় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর গড়ে তোলে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, তার কমিটির মেয়াদ আট বছর অতিবাহিত হলেও এ অঞ্চলের নেতারা কমিটি দিতে চায় না। বেশ কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলেও তা অনুমোদন হয়নি। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে ডাকা হয় না। বরং যাদের পদ নেই তারা এখন ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে বিশৃঙ্খলা করা হয়, তারা অনুপ্রবেশকারী। জেলখানার মোড়, কালুশাহ সড়ক, চাঁদমারী, আলেকান্দা জুয়ার আসর চলে। আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বরিশালেও শুদ্ধি অভিযান দরকার।

মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, বরিশালে হাইব্রিডদের, অনুপ্রবেশকারীদের কর্তৃত্বের অবসান হওয়ার দরকার। যারা টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজি করে তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের ধরুক এটাই দল চায়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নগরীর বহুতল ভবনে যারা বার বানিয়ে জুয়ার আসর বসায় তারা কি আওয়ামী লীগের। এদেরও দলের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গির বলেন, হাইব্রিড, লুটেরা দলে থাকবে না। বরিশাল আওয়ামী লীগ সরকারের এ ধরনের অভিযানকে স্বাগত জানায়। বরিশালে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃত্ব না থাকলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আছে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করছে তারা হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। একেএম জাহাঙ্গির আরো বলেন, ক্যাসিনোর আদলে বরিশালে জুয়ার আসর যারা বসায় তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতার করবে বলে মহানগর আওয়ামী লীগ আশা করে। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজি করে তাদেরকে বেধে রাখার আহবান জানান তিনি।
অপরদিকে চলমান অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ণ ও মাদকের চক্রকে ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। যে-ই অপরাধ করুক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) জানিয়েছেন, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে পুলিশ এখন বেশি তৎপর। অপরাধীরা গা-ঢাকা দিলেও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, অপরাধীরা যত বড়ই শক্তিশালী হোক তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech