পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়াতে সক্ষম হয়েছে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য।
আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের নানান আয়োজন ছিলো কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগনের সুস্বাস্থ্য-সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে জন্মশতবার্ষিকীতে কোন অনুষ্ঠান সেরকমভাবে আয়োজন করেননি।
এটা দিয়ে প্রমান হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগনের সুস্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা সব-সময় চিন্তা করেন। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ তলবিহীন ঝুড়ি বলতে পারবে না।
বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে এমন একটি পরিচিতি এরইমধ্যে লাভ করেছে এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পৃথিবীর বুকে পরিচিতি লাভ করেছে।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনে “চন্দ্রমোহন দাখিল মাদ্রাসা” ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও “চন্দ্রমোহন ৬৯ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নতুন ভবন শুভ উদ্ধোধন এবং কালাবদর ও আড়িয়াল খা নদী ভাঙ্গন পরিদর্শন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
করোনার সময় প্রধানমন্ত্রী দুহাতে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দিয়েছেন, যাতে খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের পরিবার নিয়ে দু’বেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী লাভ করায়।
চন্দ্রমোহনবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আপনারা আমাকেও ভোট দিয়েছেন। কিন্তু অল্প ভোটের ব্যবধানে আমি হতে পারিনি, বিএনপি’র সংসদ হয়েছিলো।
আমার কাছে আশ্চর্যলাগে বরিশাল একটি বিভাগীয় শহর। এই শহরের পাশেই সদর উপজেলা কিভাবে সেই এলাকাটি অবহেলিত থাকে! গেলো ৫ টাইম অর্থাৎ ২০-২৫ বছর এই সদর উপজেলার সংসদ সদস্য ছিলেন তারা কি করেছেন? কিন্তু সবাই তো তাদেরই ভোট দিয়েছেন।
সাধারণভাবে কি হয়, যাকে ভোট দেয়া হয তিনি যদি কাজ না করেন, তাহলে পরবর্তীতে অন্যকে ভোট দেয়া হয়। কিন্তু বিগত ২০ বছরে বরিশাল সদর উপজেলায় কোন কাজ হয়নি, অথচ একই ব্যক্তিকে বার বার ভোট দেয়া হয়েছে।
আমি যে অনুদান পাই সরকারের কাছ থেকে তা কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবেই, মন্ত্রী হিসেবে বাড়তি কিছু পাই না। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সারাবাংলাদেশে নদীভাঙ্গনগুলো দেখার কাজ আমার। বরিশালেও আমাদের বেশ কিছু প্রকল্প চলছে, আর এ অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন রোধে আরো বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
চন্দ্রমোহনসহ যে ইউনিয়নগুলো বরিশালে রয়েছে সেগুলো উন্নত হয়, এবং রাস্তাঘাট, স্কুল-মাদ্রাসা বানাতে পারি সেজন্য আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছি।
ইতিমধ্যে বরিশাল সদর উপজেলার ৬৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে সংস্কার করার জন্য। আরো ৪০ টি বিদ্যালয়ের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এছাড়া ৭৭ টি সরকারি বিদ্যালয়ে ওয়াশড্রপের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নেহালগঞ্জের ব্রীজের উদ্বোধনও খুব শ্রীঘ্রই হবে।
সদর উপজেলার একটি স্টেডিয়াম, একটি হাসপাতাল, ১৫ টি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে। এছাড়া রাস্তা-ঘাটের প্রকল্প হাতে আছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে সদর উপজেলার রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-মাদ্রাসার কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়ে যাবে। আমি চাই আমার এই ৫ বছরের মধ্যে বরিশালকে মোটামুটি ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে।
নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যেখানেই যাই নদী ভাঙ্গন দেখি, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহনের চেষ্টা করি, নির্দেশনাও দিতে পারি যাতে দ্রুত কাজ শুরু হয়।
এজন্য সবসময় আমাদের মন্ত্রনালয়ের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সাথে রাখি। তবে মনে রাখতে হবে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কাজ শুরু হতে একটু সময় লাগে।
কারণ আমাদের দেশের একেক জায়গার নদীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট একেক রকম। এজন্য একেক জায়গায় ভাঙ্গন রোধে একেক ধরণের কাজ করতে হয়। তাই কারিগরি কমিটির সঠিকভাবে কাজ করতে সময় লাগে।
আর তারাহুরো করলে দেখা যাবে নির্মানের ১ বছরের মাথায় বাধটি ভেঙ্গে যাবে। তখন আপনারাই বলবেন ঠিকাদাররা প্রকৌশলীদের সাথে আতাত করে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দক্ষিনাঞ্চলে উন্নয়ন হয়, কিন্তু অন্য সরকার আসলে দক্ষিনাঞ্চল অবহেলিত থাকে।
শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মাসেতু রেডি হয়ে গেছে, আগামী ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে আমরা পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টার বরিশাল থেকে ঢাকায় যেতে পারবো।
এটা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দুর্নিতীর কথা বলে টাকা দেয়া দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো, কিন্তু তা প্রমান হয়নি।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমাদের টাকা দিয়ে পদ্মাসেতু বানাবো এবং তিনি সেটা প্রমান করে দেখিয়েছেন। এখন বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সাথে চিন্তাভাবনা করে কথা বলে। এখন তারা আমাদের প্রকল্পের জন্য বলে।
আগে একটি কথার প্রচলন ছিলো যে, কোন জেলায় রেল নেই? উত্তর ছিলো বরিশাল। কিন্তুপদ্মা সেতুর কারণে সেই কথাও আর কেউ বলতে পারবে না। আমাদের এখানেও রেল চলবে। বরিশাল থেকে ঢাকায় ট্রেনে চেপে যাবো।
আজ পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর হচ্ছে, বিদেশীরা জাহাজ নোঙ্গর করবে সেখানে। বিভাগীয় শহর বরিশাল এখানেও বিদেশীরা আসবে, বিভিন্ন ধরণের অফিস করবে।
বড় বড় ইন্ডাষ্ট্রি হবে সেসব জায়গায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের চাকুরি হবে। এজন্য আমাদের ছেলেমেয়েদেরও যোগ্য করে তুলতে হবে। হাতের কাজ অর্থাৎ কারিগরি কাজ শেখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ সন্তানদের পড়াশুনা করান, হাতের কাজ শিখান।
যোগ্য করে সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সে কাজ পায়। আমি টিউবয়েল, টিআর-কাবিখা দিয়ে কিংবা কোন সুপারিশ করে টাকা খাই না। মন্ত্রনালয়ের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার টেন্ডার দিয়েছি কিন্তু কেউ বলতে পারবে না আমি টাকা খেয়েছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি মারা গেলে সাড়ে তিনহাত মাটিতেই আমাকে যেতে হবে।
টাকা নিয়ে তো আমি কবরে যাবো না? আর টাকা বেশি থাকলেও সাড়ে ৩ হাতের কবর সাড়ে ৫ হাত করা যাবে না। আমার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যাতে বরিশাল শহর ও সদর উপজেলা একইতালে সমৃদ্ধ ও সুন্দর করা যায়। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। আশাকরি আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হবে বরিশাল।
করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের মধ্যে সবাইকে সুরক্ষিত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানান তিনি।
ভাষ্কর্য্য নিয়ে তিনি বলেন,এটা পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই আছে। পাকিস্তানের বেনজীর ভূট্টো বিশাল একটা ছবিতে হাত নিয়ে দাড়িয়ে আছে, মোহাম্মদ আলী জিন্নার ভাষ্কর্য্য আছে।
পাকিস্তান তো কট্টোর পন্থী ইসলামিক দেশ। আমি মনে করি, আমরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, মিথ্যা কথা না বলি, আমরা যদি চুরি না করলে আল্লাহ আমাদের দোযখ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবেন।
আমরা যদি নামাজ পরে মিথ্যা বলি, একজনের পেছনে আরেকজন লেগে থাকি তাহলে যতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে কপালে দাগ ফেলি তাতে কাজ হবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন জনসেবা করার জন্য। এরবাহিরে আমি কিছু চিন্তা করি না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসলেই দক্ষিনাঞ্চলসহ গোটা দেশের উন্নয়ন হয়। তাই তার হাতকে শক্তিশালী করলেই দক্ষিনাঞ্চল দিন দিন আরো উন্নতি লাভ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোন অল্টারনেটিভ নাই। দশবছর আগে বাংলাদেশের টাকা-পয়সা ছিলো না কিন্তু এখন আমাদের ৪২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে, যা আগে ছিলো ৩-৪ বিলিয়ন।
সভায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মোঃ জামাল উদ্দিন, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিবুর রহমান, চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এস.এম মতিউর রহমান সহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।