বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, দলে (বিএনপিতে) কিছু টাউট-বাটপার আছে, এরা ছড়ায় যে, উনিতো সংস্কারপন্থী। আরে সংস্কারতো ভালো জিনিস।
রাজা রাম মোহন রায় সংস্কার করেছেন। গান্ধী সংস্কার করেছেন। নেলসন মেন্ডেলা সংস্কার করেছেন। তবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার চিন্তা তখনও ছিল না, এখনও নেই। আমি বিএনপির একজন অনুগত সৈনিক।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানী বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, (১/১১ পর) খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার পর তার সঙ্গে আমি দেখা করি। তাকে জানিয়েছি জেলখানা থেকে পাঠানো প্রত্যেকটা নির্দেশ আমি পালন করেছি। তিনি আমার সঙ্গে অত্যন্ত সদয় আচরণ করেছেন। ২০১৬ সালে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বহাল রেখেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন, ২০১০ সালে আমার এলাকায় উপ-নির্বাচন, ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া একটি সংস্কার প্রস্তাব এনেছিলেন। দলীয় সংস্কারের জন্যে, সেখানে বিএনপির ১০৫ জন এমপি লিখিতভাবে তাকে সমর্থন করেছেন। সেখান থেকে আমিসহ মাত্র পাঁচজনকে ২০০৮ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার কার্যক্রম পরীক্ষা করেইতো খালেদা জিয়া আমাকে মনোনয়ন দেন বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাখেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে পাক বাহিনীর সঙ্গে দিনব্যাপী মরণপণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিকেলে সিলেট শহর দখল করেছি। আমার অধিনস্ত ১৪ জন সৈনিক সেখানে শহীদ হয়েছে। এ ১৪ তারিখেই আমার দল আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্মান এখানে নেই। কীভাবে দেশটা স্বাধীন হলো অনেকেরতো ৫০ বছর বয়সই হয়নি। তারা জানে না, হোয়াট উই হ্যাব ডান ফর দিস কান্ট্রি? উই হ্যাব ক্রিয়েটেড দিস কান্ট্রি। কোনো বক্তৃতায় এ দেশ স্বাধীন হয়নি, বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছি। কি কারণ দর্শাও আমাকে দেখায়? জিয়াউর রহমান বেহেশতে থাকলে উনিও লজ্জা পাবেন। যে মেজর হাফিজকে বিএনপি শোকজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নেই। এ সরকার অনেক চেষ্টা করেছে, আমার বিরুদ্ধে তো কোনো দুর্নীতি পায়নি। ঢাকা শহরে আমার একটা বাড়ি নেই। এ বাড়ি আমার বাবার। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান আমলে সংসদ সদস্য থাকাকালে এটা পেয়েছিলেন, পারিবারিক ভাগাভাগিতে আমি এটা পেয়েছি। বিএনপিতে এমন নেতা আছেন যার ১০০ মতো বাড়ি আছে ঢাকা শহরে। দুর্নীতির অভিযোগতো আমার বিরুদ্ধে নেই। কেন এ অভিযোগ আনলো বুঝতে পারছি না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ বলেন, আমাদের দল বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিগত চার বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগই পাইনি। আজ নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির একজন নগন্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই। ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হোক। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভায় রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী রূপে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে।
তিনি বলেন, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক। সম্প্রতি আমার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে গঠন করেছেন, আহ্বায়ককেই আমি চিনি না। ছাত্রলীগের কর্মীরাও এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমার সুপারিশকে বিবেচনা করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে কোনো উত্তর পাইনি।
তিনি আরও বলেন, জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যের প্রতি কখনোই কটুক্তি করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। রাজনীতি ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ হৃদয়ে লালন করবো। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো। আমার বিনীত অনুরোধ আমার বক্তব্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে যদি দোষী সাবস্ত্য করা হয় আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি।