ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ওড়াকান্দি আসতে পেরে আমার বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে। একইভাবে এই স্থান ভারত ও বাংলাদেশের আত্মীক সম্পর্কের তীর্থস্থান। আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। মনের সঙ্গে মনের সম্পর্ক। ভারতের হাজার হাজার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ওড়াকান্দি এসে যে অনুভব করে, আমিও ঠিক তেমন অনুভব করছি। এই পবিত্র দিনের অপেক্ষা আমার বহু দিনের। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন বাংলাদেশে আসি তখনই আমি এখানে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম। আমার সেই প্রত্যাশা ও কামনা আজ পূর্ণ হলো। আমি নিয়মিতভাবে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আনুগামীদের কাছ থেকে ভালবাসা ও স্নেহ পেয়েছি।’শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে মতুয়া নেতা ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মোদি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ নিজেদের বিকাশ ও নিজেদের প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। উভয় দেশই পৃথিবীর অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, প্রেম ও শান্তি দেখতে চায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ ও ভারতের সামনে একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার সমাধানের জন্য শ্রীশ্রী হরিচাঁদের অনুপ্রেরণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দু’ দেশের একজোট হয়ে প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের মেকাবিলা করা উচিত। এটি আমাদের কর্তব্য।
করোনা মহামারিতে ভারত-বাংলাদেশ একসাথে কাজ করার কথা উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, উভয় দেশ নিজেদের সামর্থের পরিচয় দিয়েছে। এ মহামারি একসাথে মিলে মোকাবিলা করছে। মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিন বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে যাতে পৌঁছানোকে ভারত নিজেদের কর্তব্য মনে করে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভারত সহযাত্রী। ভারত আজ সকলের সাথে সকলের বিকাশ এবং সকলের বিশ্বাস–এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলছে। আর বাংলাদেশ এতে সহযাত্রী। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সামনে বিকাশ আর পরিবর্তনের একটি শক্তিশালি উদাহরণ পেশ করেছে। সেই প্রচেষ্টায় ভারত আপনাদের সহযোগী।
মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ওড়াকান্দিতে ভারত সরকার মেয়েদের মিডল স্কুল আপগ্রেড করবে। নতুন আধুনিক সুবিধা প্রদান করবে। একই সঙ্গে ভারত সরকার এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে। এটি ভারতের কোটি কোটি মানুষের পক্ষ থেকে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা এ কাজে আমাদের পাশে আছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আসার আগে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছি। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উনার ভিশন, আর বাংলাদেশের লোকেদের ওপর উনার বিশ্বাস এক উদাহরণস্বরূপ।
এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মতুয়াদের প্রধান তীর্থপীঠ ওড়াকান্দিতে আসেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি ও মতুয়া নেতৃবৃন্দ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
তিনি ওড়াকান্দির হেলিপ্যাড থেকে সরাসরি মতুয়া মতবাদের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি পূজা-অর্চনায় অংশ নেন। পূজা শেষে বিশেষ প্রার্থনা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থনা শেষে ওড়াকান্দি তীর্থ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গোপালগঞ্জ সদর আসনের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গোপালগঞ্জ ১ আসনের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, মতুয়া নেতৃবৃন্দ ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শনিবার বেলা ১১ টা ৩৮ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপর তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, শেখ সারহান নাছের তন্ময় এমপি উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে কিছু সময় কাটান। বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে বের হয়ে নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে বেলা ১১ টা ৫৩ মিনিটে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। দুপুর ১২টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের নৌকা চত্বরে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন।
চারা রোপণ শেষে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন। দুপুর ১২ টা ২ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স ত্যাগ করেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টায় ভারতে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। নরেন্দ্র মোদি বেলা ১১ টা ৩৭ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ২ নং গেট দিয়ে সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানান। তারপর দুই প্রধানমন্ত্রী ধীর পায়ে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের বেদীর দিকে এগিয়ে যান।
এর আগে সকাল ১০ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাকে সাথে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করেন।