আজ পহেলা বৈশাখ শুভনববর্ষ-১৪২৮। ১৪ এপ্রিল ২০২১। ঠিক এমনি একটি দিনে ৩০ বছর আগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক শাহনামা। ৩ দশক পূর্ণ করে আজ প্রকাশিত হল ৩১ বছরের প্রথম সংখ্যা। এক গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে প্রকাশ করতে হচ্ছে এ সংখ্যাটি।
সভ্যতা কোনও কোনও সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মহামারি জাতীয় গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়। আধুনিক মানব সভ্যতা এমনই এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে আজ। যা চীনের উহান থেকে প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে আজ বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চলে বিস্তার ঘটিয়ে আক্রান্ত করেছে ১৩ কোটিরও বেশি মানব সন্তানকে। আর এই মহামারিতে ৩০ লক্ষ মানব সন্তানের প্রাণসংহার মধ্যদিয়ে উলট-পালট করে দিয়েছে পৃথিবীর অনেক কিছু। দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে চাহিদা ও যোগানের অনেক তত্ব।
আজকের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ্যতা কামনা করছি তাদের যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।
মানব সভ্যকে যতোবার মহামারি আঘাত হেনেছে তা প্রতিরোধের জন্য চেষ্টা করেছে মানুষ। গবেষণা করে প্রতিরোধের জন্য তৈরি সফল ওষুধ ও ভ্যাকসিন। কিন্তু এবার এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। বরং অতীতের ভ্যাকসিন আবিস্কারে লেগেছে কয়েক বছর। কিন্তু কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিস্কারে স্বল্প সময়ে পেয়েছে সফলতা। বিশ্ব ফেলেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। কারণ, ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে বেশকিছু টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষে আশানুরূপ ফল পাওয়ায় তা সাধারণের জন্যও এখন প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য। যার মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এর বাংলাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড এস্টোজোনিকার।
বিশ্ব অনেকবার অনেক কিছুতে শঙ্কিত হয়েছে। সভ্যতা ও শান্তি সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কখনো যুদ্ধ, কখনো মহামারি, কখনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বিশ্বমন্দা। কিন্তু সভ্যতার এই চরম অগ্রগতি, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উদ্ভাবনের এই সময়ে বিশ্বময় করোনাভাইরাস নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা যেন বিজ্ঞান, অগ্রগতি, উদ্ভাবন, সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। প্লেগ, উলাওঠা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত, ডেঙ্গু আরও কত রকম রোগ-শোকে বিশ্বের একেক অঞ্চল একেক সময় উজাড় হয়েছে, ভীত হয়েছে জনপদ। কমিউনিজমের ভয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পুঁজিবাদী ব্যবস্থাও একসময় প্রমাদ গুনেছে। কিন্তু সভ্যতার চরম বিকাশের এই একুশ শতকে বিশ্বময় মানব সভ্যতার জন্য যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং গভীর সংকট তৈরি করেছে করোনাভাইরাস বা কোভিট-নাইনটিন, তা যেন নজিরবিহীন। অতীতের মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গেই যেন তার কোনো তুলনা নেই। বিশ্বময় কাঁপিয়ে দিচ্ছে প্রাণবিধ্বংসী এই করোনাভাইরাস। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে।
কিন্তু এরপরে বাস্তবতা হচ্ছে কোভিড আক্রান্তের দ্বিতীয় বর্ষে আমার দেশ আজ কোভিড’র দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছে। যে কারণে আজ থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের লকডাউন। তবে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে আশার বাণী শুনিয়ে আশ্বস্ত করেছেন এবং অভয় দিয়েছেন সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করি অতীতের মতই তার এ চেষ্টায় আমরা সফলকাম হব ইনশা-আল্লাহ।
আমরা গৌরব বোধ করি। দৈনিক শাহনামা’র সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা বাংলা দৈনিকের প্রথম সম্পাদক-প্রকাশক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশর্ত বার্ষিকী এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়নে অসামান্য অবদানে বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্তিতে। দৈনিক শাহনামা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়নের সাথে সংযুক্তি হতে পেরে আমরা গর্বিত।
প্রকাশের শুরু থেকেই দৈনিক শাহনামা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পতাকা বহন করে ১৯৯১ সালের ১৪ এপ্রিল যে পথচলা শুরু করেছিল, পাঠকের ভালোবাসায় আজও তা অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক শাহনামা মানুষের অকল্পনীয় ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে। ৩০ বছর দৈনিক শাহনামা সত্যকে সত্য হিসেবেই তুলে ধরেছে। পাঠকের আস্থা আর ভালোবাসাকে পাথেয় করে সদর্পেই এগিয়েছে দৈনিক শাহনামা। ভবিষ্যতেও একইভাবে এবং একই ধারায় দৈনিক শাহনামা এগিয়ে যাবে।
আজ সংকটের মুখে আমরা। নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আমরা অতিক্রম করতেছি প্রতিটা দিন। আমরা আজ অসহায়।
দৈনিক শাহনামা গণমানুষের কথা বলে, সমাজ ও দেশের সার্বিক কল্যাণ চিন্তা করে। সমাজ-প্রগতির সংগ্রামেও কালের কণ্ঠ অগ্রগামী সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে দৈনিক শাহনামা তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। গত ৩০ বছরে দৈনিক শাহনামা সচেতনভাবেই কিছু সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছে। মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধ তৎপরতার বিরুদ্ধে দৈনিক শাহনামা সব সময় ছিল সোচ্চার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে দৈনিক শাহনামা স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে। দৈনিক শাহনামা কোনো হুমকিতে মাথা নত করেনি; কোনো সমালোচনা গ্রাহ্য করেনি। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী কিংবা অনৈতিক কিছুকে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখার কাজটি সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে করে যাচ্ছে।
আমাদের এই সব সম্ভব হয়েছে পাঠকদের ভালোবাসা ও সহযোগিতার কারণে। পাঠকই আমাদের প্রথম বিবেচনা। আগামী দিনগুলোতেও পাঠকদের একই রকম ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাব, সেই বিশ্বাস আমাদের আছে। আজ ৩১ তম বর্ষপূর্তিতে দৈনিক শাহনামা’র অসংখ্য পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা, বিপণনকর্র্মী সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। সবার মিলিত প্রয়াসেই শাহনামা’র এগিয়ে চলা। সবার ভালোবাসা, পরামর্শ ও সহযোগিতাই আমাদের চলার পথের পাথেয়। সবাইকে অভিনন্দন। সবশেষে মহান রব্বুল আল আমিন করুণাময় আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করি এই মহামারী থেকে তুমি আমাদের মুক্তি দাও। আমিন, ছুম্মা আমিন।