চাষির কাছ থেকে মাত্র ২০-২৫ টাকায় কেনা ডাব খুচরা বাজারে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমের তীব্র গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
চলতি রমজানে প্রতিদিনের ইফতারে অনেকেই ডাবের পানি রাখায় বেড়েছে ফলটির চাহিদা।
আকার ভেদে কখনো কখনো একটি ডাবের দাম দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। নির্বিঘ্নেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পকেট ভারী করছে ডাব ব্যবসায়ীরা।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের মৃধারহাটের বাসিন্দা মো. ফিরোজ হাওলাদার। বহু বছর ধরেই গাছের ডাব বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে।
এ বছরও তার গাছে ফলা ৯৮ জোড়া ডাব কিনে নিয়েছেন পাইকাররা। আকার ভেদে প্রতি পিস ডাবের দাম পড়েছে ১৫, ২০ ও ২৫ টাকা।
বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা নারিকেল চাষি গৌতম পালের রয়েছে ৭৫টি নারিকেল গাছ। প্রতি বছরই ডাব বিক্রি করেন তিনি।
এবারো করেছেন। প্রতি পিস ২০ টাকা ও ২৫ টাকা করে। এ তো গেল বরিশালের কথা। সমুদ্র উপকূলবর্তী ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং পিরোজপুর থেকেও পাওয়া গেছে চাষি পর্যায়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে ডাব বিক্রির তথ্য।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বাসিন্দা নাসির সরদার বলেন, আড়াই শতাধিক নারিকেল গাছ রয়েছে আমার।
প্রতি বছরই ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস দরে ডাব বিক্রি করি পাইকারদের কাছে। গাছে উঠে ডাবের হিসাব করে দাম বুঝিয়ে দেয় পাইকার।
মূলত বরিশাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয় ডাব। এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ অন্য উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও উৎপাদিত হয় মিষ্টি পানির ডাব।
কয়েকজন পাইকার বলেন, সব খরচ শেষে আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে একেকটি ডাব সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করি।
সেটা কি করে ১০০-১২০ টাকা হয়ে যায় তা তারাই ভালো বলতে পারবে। বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরের বাসিন্দা ডাবের পাইকার হারুন অর রশিদ ও আ. সালাম ফকির বলেন, ‘২০ থেকে ২৫ টাকা দরে প্রতি পিস ডাব কিনলেও তা গাছ থেকে সংগ্রহ এবং প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মোকাম পর্যন্ত আনতে ঘাটে ঘাটে টাকা খরচ হয়।
একজন গাছি (যারা গাছে উঠে ডাব কেটে নিচে নামায়) প্রতিবার গাছে উঠতে নেয় ৫০ টাকা।
তাছাড়া ভ্যান কিংবা ট্রাকে করে সেই ডাব বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতেও অনেক খরচ হয়।
সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে ৫-৭ টাকা লাভ ধরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। এতে ডাব প্রতি ৩৫-৪০ টাকার বেশি দাম পড়ে না।
পাইকারদের কাছ থেকে এই দামে সংগ্রহ করা ডাবই সাধারণ মানুষের কাছে ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা।
বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় পর্যন্ত ডাব বিক্রি করতে দেখা গেছে খুচরা বিক্রেতাদের।
নগরের বিবিরপুকুর পাড় এলাকার ডাব বিক্রেতা সিরাজ ব্যাপারি দাবী করেন, পাইকারদের কাছ থেকে ৬০-৬৫ টাকা করে প্রতি পিস ডাব কিনি।
এরপর পরিবহন খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০-১২০ টাকায় না বেচলে পোষায় না। একই ঘটনা ঘটে নগরের নতুন বাজার এলাকার খুচরা বিক্রেতা ইদ্রিস হাওলাদারের ক্ষেত্রে।
সেও ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছে ডাব। লঞ্চঘাট এলাকার ক্রেতা মনির মাঝি বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। সেখানে বরিশালের বলে ১২০-১৫০ টাকা দরে প্রতি পিস ডাব বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, তরমুজের পর এবার ডাব।
পাইকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি দামে এই দুটি পণ্যই বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। দুটি ক্ষেত্রেই একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এখানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।
সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এখনই এই সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে আগামীর দিনগুলোর জন্য ভয়ঙ্কর হবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তরমুজের বাজারে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান হয়েছে। এখন থেকে ডাবসহ অন্য মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রেও একইভাবে অভিযান চলবে।
(সূত্র যুগান্তর)