বরিশাল প্রতিনিধি :
প্রয়াত স্বজনদের সামাধিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শান্তি কামনার মধ্যে দিয়ে বরিশাল নগরীর কাউনিয়াস্থ ২০১ বছরের পুরনো মহাশ্মশানে উপ মহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপাবলী উৎসব পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট থেকে শ্মশান বিপালীর তিথির সূচনা হয়। যা থাকবে আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ২২ মিনিট পর্যন্ত। ভূচতুরদশী তিথিতে এই দিপাবলী করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সন্ধ্যায় নগরীর কাউনিয়ায় অবস্থিত মহাশ্মশানে প্রয়াত স্বজনের স্বরণে প্রার্থনা করেন তারা। এসময় পরিবেশন করা হয় প্রয়াত স্বজনদের পছন্দের খাবার। দিপাবলী উৎসবকে ঘিরে সকাল থেকেই মৃত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় শ্মশানে ভীর বাড়তে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। প্রতিবছরই এ বৃহৎ শ্মশানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন হয়ে থাকে। প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও সমাধিতে তার প্রিয় খাদ্যসহ বিভিন্ন উপাচার ও ফুল দিয়ে সমাধি সাজিয়ে তোলা হয়। পূর্ব-পুরুষের স্মৃতিতে করা হয় এ প্রার্থনা। তবে যাদের স্বজনরা দিপাবলী উৎসবে এখানে আসে না, সেসব সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। করোনার কারণে গত বছর সীমিত পরিসরে শ্মাশান দিপাবলী পালন করা হলেও এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাপক ভাবে পালন করার হয়েছে শ্মশান দিপালী। এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে। শ্মশান দিপালীতে আসা ক্ষমা রানী দাস জানান, তার মায়ের সমাধী এই শ্মশানে তাই তিনি এখানে এসেছেন। গত বছর করোনার কারনে এখানে আসতে পারেন নাই। এ বছর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে দিপালী পালন করতে ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মহাশ্মশানে ৬৫ হাজারের মতো সমাধি রয়েছে। এসব সমাধীতে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল ও ভারতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এসেছে। প্রায় ৬ একর জমির উপর এ মহাশ্মশান। তবে করোনার কারণে গত বছর সীমিত পরিসরে শ্মাশান দিপালী পালন করা হলেও এ বছর ব্যাপক ভাবে পালন করা হচ্ছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় ধর্ণাঢ্য জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় নতুন বাজারে প্রথম মহাশ্মশান স্থাপিত হয়। পরে তা কাউনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এ মহাশ্মশান মৃত্যুর ৮০ বছর পর ঠাই হয়েছে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সমাধি। ২০১২ সালে ভারতের কেওড়া তলা মহাশ্মশান থেকে চিতাভস্য এনে এ মহামশ্মশান স্থাপন করা হয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিল্পবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধি রয়েছে এ মহাশ্মশানে। পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৯২৭ সাল থেকে এ শ্মশান দিপালী উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উপমহাদেশের মধ্যে এ মহাশশ্মানকে ঘিরে সবচেয়ে বড় শ্মশান দিপালী হয় বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুডু। উপমহাদেশের অন্য কোথাও এরকম আলোক মালার সজ্জা দিয়ে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে উৎসব পালন করার নজির নেই। তাই দেশ-বিদেশের স্বজনরা শ্মশান দিপালীর সময় এখানে ছুটে আসেন। প্রতি বছর ভূত চতুর্দশীর পূর্ণ তিথিতে সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে এ উৎসব পালিত হয় বলে এর নাম দেয়া হয় শ্মশান দিপালী বলে জানান তিনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জাকির হোসেন মজুমদার জানান, ‘শ্মশান দিপালী উৎসব ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তায় সাদা ও পোষাকধারী ২শ’র বেশি পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষনিক কর্মরত আছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা, সিসি ক্যামেরা চালু রাখা সহ নানান বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।