আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি ।
দক্ষিনাঞ্চলের বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা ও বরগুনা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কে বাস ভাড়ায় চলছে মহা নৈরাজ্য। সরকার নির্ধারিত ভাড়া উপেক্ষা করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে বাস গাড়ীর স্টাফদের বাক-বিতন্ডের ঘটনা ঘটে। বাস মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগী যাত্রীদের আরো অভিযোগ প্রশাসন জেনেও এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনে নিরব ভুমিকা পালন করছে। দ্রুত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, গত বুধবার জ¦ালানি মন্ত্রনালয় কেরোসিন এবং ডিজেলের মুল্য বৃদ্ধি করে। জ¦ালানি তেলের দাম কমানোর দাবীতে বাস মালিক সমিতি তিন দিনের ধর্মঘট পালন করেছে। সরকার কর্তৃক বাস ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষনায় তারা ওই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা ও বরগুনা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কে বাস ভাড়ায় চলছে মহা নৈরাজ্য। বাস ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষনার পরপরই বাস মালিক সমিতি ও বাস স্টাফরা ইচ্ছা মাফিক ভাড়া আদায় করছে। সরকার নির্ধারিত বরিশাল থেকে কুয়াকাটার ভাড়া ২’শ ৩০ টাকা কিন্তু বাস মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষ আদায় করছে ২’শ ৭০ টাকা। পাগলা থেকে আমতলীর ভাড়া ৮০ টাকা কিন্তু আদায় করছেন ৯০ টাকা। পটুয়াখালী থেকে আমতলীর ভাড়া ৬০ টাকা কিন্তু বাস স্টাফরা আদায় করছে ৭০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিদিন বাস স্টাফদের সাথে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করলেই বাস স্টাফরা যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন করেন। এমনকি বাস থেকে নামিয়ে দেন। যাত্রীরা দ্রুত প্রশাসনের কাছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশী আদায় বন্ধের দাবী জানিয়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে চলাচলকারী বিআরসিটি কর্তৃপক্ষ সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করছে। কিন্তু মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
বুধবার কুয়াকাটাগামী জান্নাতি বাসের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বরিশাল থেকে কুয়াকাটা ২’শ৩০ টাকার ভাড়ায় আদায় করছে ২’শ ৭০ টাকা। লেবুখালী থেকে আমতলীর ভাড়া ৮০ টাকা আদায় করছে ৯০ টাকা। পটুয়াখালী থেকে আমতলী ভাড়া ৬০ টাকা আদায় করছে ৭০ টাকা। এভাবেই দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
বাসের যাত্রী সুরাইয়া, লাভনী, সোহেল হাওলাদার ও জব্বার মিয়া বলেন, বাস গাড়ীর স্টাফরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই ঝগড়া ঝাটি শুরু করে। দ্রুত অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় বন্ধের দাবী জানান তারা।
যাত্রী মিরাজ, কুলসুম ও শাওন বলেন, আগে পটুয়াখালী থেকে আমতলী বাসভাড়া ছিল ৫০ টাকা কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধির অযুহাত দেখিয়ে মালিক সমিতি বাস ভাড়া আদায় করছে ৭০ টাকা। তাতে আগের ভাড়ার চেয়ে ৪০% বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা চরম নৈরাজ্য। তেলের দাম বাড়িয়ে বাস মালিক সমিতির লাভ হয়েছে। ক্ষতি যত সব জনগনের। দ্রুত অতিরিক্ত বাস ভাড়া বন্ধের দাবী জানান তারা।
বরগুনা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোঃ হাসান মৃধা অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, আগামী সপ্তাহে চার জেলার মালিক সমিতি সমন্বয় মিটিং করে বাস ভাড়া পুণঃ নির্ধারন করা হবে। তিনি আরো বলেন, যেই সকল বাস মালিক সমিতির ভাড়ার তালিকা ব্যতিরেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে এর দায়ভার ওই বাস কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এর দায় মালিক সমিতি নিবে না।
বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আভ্যন্তরীণ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিপন মিয়া বলেন, প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৮০ পয়সার সাথে টোল ভাড়া যোগ করে ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুসারে ভাড়া আদায় করতে হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশী আদায় করা যাবে না। যারা বেশী ভাড়া আদায় করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেও বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।