শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্যাসটেক্স বলেন, করোনার পঞ্চম ঢেউ এসে গেছে এবং এটি পুরো উদ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ইউরোপে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আলোর গতিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ক্যাসটেক্স আরও বলেন, জানুয়ারির শুরুতেই হয়তো দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং উচ্চ সংক্রমণযোগ্য এই ভ্যারিয়েন্ট ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নতুন বছরের ছুটির দিনগুলোতে সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য কনসার্ট নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এছাড়া নববর্ষের আয়োজনে আতশবাজির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে।
ক্রিসমাস উৎসবে লোকজনের বিশাল সমাবেশ এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বড় পরিসরে মেলামেশা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত কম লোকজন থাকবেন তত কম ঝুঁকি তৈরি হবে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের ওপর ভ্রমণে বিধিনিষেধ জারি করেছে ফ্রান্স। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
ব্রিটেন থেকে ফ্রান্সে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বর্তমান অবস্থা ফরাসি কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানানো হয়েছে।
শনিবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ের ভেরান বলেন, দেশের নতুন শনাক্ত হওয়া কেসের মধ্যে ১০ শতাংশের পেছনে ওমিক্রন দায়ী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
জার্মানিতে শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার। এ অবস্থায় জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটোরব্যাচ সাংবাদিকদের বলেছেন, জার্মানি মুখোমুখি হয়নি এমন এক চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে হবে পুরো দেশকে।
করোনাভাইরাসের কারণে আয়ারল্যান্ডে শুরু হয়েছে তৃতীয় ঢেউ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে দেখা যায়নি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আগের যেকোনো রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে এই সংক্রমণ। বৃটেনে টানা তৃতীয় দিনের মতো করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন রেকর্ড তৈরি করেছে তখন এসব সর্তকতা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য টানা তৃতীয় দিনের মতো বৃটেনে একদিনের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করেছে ৯৩ হাজার। এর বেশিরভাগই আক্রান্ত ওমিক্রনে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃটেন থেকে যাওয়া যেকোন পর্যটক অথবা ব্যবসায়ীকে ফ্রান্সে প্রবেশের ক্ষেত্রে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ফ্রান্স। তবে পোর্ট অব ডোভার এবং ইউরোস্টার টারমিনালে বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড় রয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ক্যাসটেক্স বলেছেন করোনা সংক্রমনের ঢেউকে থামিয়ে দেয়ার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। তার মধ্যে ভ্রমণ বিধি-নিষেধ অন্যতম। এরইমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নতুন বর্ষবরণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা এবং আতশবাজির উৎসব। নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন।
এ অবস্থায় নভেম্বরের শেষের দিকে বার, রেস্তোরাঁ এবং বেশিরভাগ দোকানপাট বিকাল ৫টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার নেদারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৫ হাজার ৪০০। তবে এই সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম। খেলাধুলার আয়োজন করা হচ্ছে অর্ধেক সক্ষমতা নিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হয়েছে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে সেখানে সর্বোচ্চ ১০০ অতিথি উপস্থিত থাকতে পারবেন।