শামীম আহমেদ ॥
জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিলাম ডিক্রি, দলিল ও পর্চা সৃষ্টি করে অন্যর জমি আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাওলাদার সহ ৫ জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
আজ ২ ফেব্ররী বুধবার বরিশালের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিবুল হাসান বিচারাধীন আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। হাজতে যাওয়া মামলায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম উপজেলার বামনীকাঠী এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে। হাজতে যাওয়া অন্যান্যরা হলেন দাড়িয়াল এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদারের অপর ছেলে আঃ রশিদ হাওলাদার, আবুল হোসেন হাওলাদার, তহিদুল ইসলাম হাওলাদার, ও সাহানুর বেগম। আদালত সূত্র জানায়, একই এলাকার নরেন্দ্র নাথ পাল তার পৈত্রিক ওয়ারিশ থেকে পাওয়া ৬০২ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওই জমি আত্মসাত করতে ২০১৫ সালে একটি জাল নিলাম ডিক্রী সৃষ্টি করেন। ২০১৬ সালে ওই জাল ডিক্রী উপস্থাপন করে জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে নরেন্দ্র পাল বাধা দেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নিলাম ডিক্রী জাল। এছাড়া শহিদুল ইসলাম নিলাম ডিক্রী ব্যবহার করে জাল দলিল ও পর্চা সৃষ্টি করে নরেন্দ্র পালের ৩ একর ৫৩ শতাংশ জমি নিজ নামে মালিকানা করিয়ে নেন। বাকী জমি আত্মসাত করতে নরেন্দ্র পালের দুই ফুফু জয়া ও গীতা এবং হেমায়েত হোসেনের নাম ব্যবহার করে একটি সাব কবলা দলিল সৃষ্টি করেন যা খুলনা জেলার সাতক্ষীরা সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল সম্পাদন দেখানো হয়। এছাড়া জাল পর্চা সৃষ্টি করে ২০১৬ সালে ওই জমির রেকর্ড সংশোধন করার চেষ্টা করে ভূমি অফিস থেকে ব্যর্থ হয়।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন নরেন্দ্র পাল। আদালত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন। চলতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সেলিম ঘটনার সত্যতা ও আঃ মোতালেব হাওলাদার মারা যাওয়ায় তার অব্যাহতি চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। তারা আদালতে হাজির না হলে ১২ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এস এম মাহফুজ আলম তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তারা গতবছর ২২ ডিসেম্বর উচ্চাদালতে হাজির হয়ে ৬ সপ্তাহের জামিন লাভ করেন।
বুধবার জামিনের মেয়াদ শেষ হলে ওই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানায়। আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে হাজতে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ১ ফেব্রয়ারী একই মামলায় অভিযুক্ত বিনোদ বিহারী পালের মেয়ে জয়া রানী পাল ও গীতা রানী পাল আত্মসমর্পণ করে জেল হাজতে গেছে এবং বামনীকাঠীর মৃত নুর মোহাম্মদ সিকদারের ছেলে হেমায়েত হোসেন খোকন ও চেয়ারম্যানের বোন কহিনুর বেগম এখনো পলাতক রয়েছে।