শনিবার সকাল ১১টায় আমন্ত্রিত ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে আলোচনায় বসে সার্চ কমিটি।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সব মিলিয়ে ৩শ ২৯ জনের নামের প্রস্তার পেয়েছে সার্চ কমিটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ১৩৬ জনের, পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ জনের নাম এসেছে। এ ছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন ২৯ জন এবং ইমেইলে এসেছে ১২৪ জনের নাম। এগুলো পরবর্তীতে কমিটি দেখবে। এমনো হতে পারে একজনের নাম ৪-৫ বার আসতে পারে।
এছাড়া ২ ঘন্টার বৈঠক শেষে বিশিষ্টজনেরা বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা যেন সৎ, যোগ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হন সে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য মাকসুদ কামাল জানান, যাদের নাম দেয়া হবে তারা যেন সৎ ও যোগাযোগে দক্ষ সেইসাথে ফিল্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের নিতে হবে। সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে এমন কাউকে দেয়া যাবেনা। তারা যেন দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পুরো প্রক্রিয়া যেন বিতর্কিত না হয়। সার্চ কমিটির ওপর আস্থা রয়েছে।
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, সৎ, যোগ্য, বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিরা যেন দায়িত্ব পান। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাউকে নেয়া যাবে না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানানম যারা কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী ছিলেন, এবং বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন, সেসব বিতর্কিত লোকজন যেন দায়িত্ব না পান।
এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি মাহফুজা খানম, মতামত দেয়া হয়েছে যে, যারা আসবেন দায়িত্বে, তারা যেন সৎ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হন
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নির্দিষ্ট কোনও একটি পেশার প্রতি বেশি গুরুত্ব না দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যারা আসবেন দায়িত্বে, তারা যেন বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। সুবিধাভোগী বলতে, যারা কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। এবং কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতী ও কারও পক্ষে কাজ করেছেন, এমন না হন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানান, যারা কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী ছিলেন, এবং বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন, সেসব বিতর্কিত লোকজন যেন দায়িত্ব না পান।
পরে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সাথে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। বৈঠকের পর ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু জানান, গণমাধ্যম থেকে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বলেছি যে, বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একেবারে ঐকমত্য তৈরি করা মুশকিল। সমাজের একটি অংশ যখন এই প্রক্রিয়ার বাইরে, তখন আপনাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব যাতে সাধারণ গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তালিকা প্রকাশ করতে পারেন। কেননা একটি দল যারা বর্জন করছে তারা তো বিরোধিতা করবে।
তারা নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপিসহ এ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা দলগুলোকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম বলিনি। কিন্তু এটা বলেছি, এ নির্বাচন কমিশনের ওপর অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব এ কারণে, কারণ বিগত নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে নির্বাচনটি করতে হলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। যেকোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয় সংখ্যালঘুরা। এই নির্বাচন কমিশনে কোনোকালে সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। আমরা বলেছি গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে। সিভিল সোসাইটিতে ভালো ভূমিকা আছে তাদেরকে নিতে। প্রস্তাবে এমন নাম থাকা উচিত, যারা আগামীতে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যতসব নাম আসছে সেগুলো প্রকাশ করুন। আমরা দুই-একজনের নাম প্রস্তাব করেছি। আমরা আগে পাঁচটা নাম দিয়েছিলাম। সাখাওয়াত প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আর্মির চিফ ইকবাল করিম ভূইয়া, আমাদের প্রথম মহিলা বিচারপতি নাজমুন আরা, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা কামাল। তাছাড়া আমি বলেছি, যেহেতু ১০টি নাম সেকারণে আমি আরও তিনটা নাম বিবেচনায় নিতে বলেছি। একজন হল প্রাক্তন আইন সচিব কাজী হাবিুবুর আউয়াল। উনি খুব সাহসীভাবে আর্মির একটা ধরেছিলেন। এজন্য আমি মনে করি যে উনি একজন সাহসী মানুষ। তাছাড়া আরও দুজনের নাম আমি প্রস্তাব করেছি।
তিনি বলেন, যদিও বিএনপি আর কিছু রাজনৈতিক দল আসছে না, তাদের আবারও চেষ্টা করার জন্য। আমার মতে তাদের সরকার পতনের আন্দোলন সেটা তারা করতেই থাকুক। তাহলেও তো একটা নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন কমিশনে যদি ভালো সাহসী লোক না যায়, কেবল সরকার পরিবর্তন হলে হবে না। আপনারা পুনরায় চেষ্টা করে দেখেন আলোচনা করা যায় কি না। সরকার পবির্তন হলো কিন্তু ভালো ইলেকশন কমিশন হলো না, তাহলেও কিন্তু হবে না।
বৈঠকে যোগ দেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, প্রবীণ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬০ জন বিশিষ্টজনের মতামত নেবে সার্চ কমিটি। এজন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বিএমএ, জাতীয় প্রেসক্লাব, কেআইবি, আই ই বি, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সিইসি ও অন্যান্য ইসি পদে দুইজন করে মোট দশজনের নাম রাষ্ট্রপ্রতির কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এই কমিশনের নেতৃত্বেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।