ডেস্ক রিপোর্ট:
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, ভারতে গ্রেপ্তার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আজ রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
পিকে হালদারকে ভারতের পাসপোর্টসহ ধরা হয়েছে। তাঁর কাছে ভারতের আধার কার্ড পাওয়া গেছে। সেদেশের ভোটার আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে। প্রথমে ভারতের আইনে তাঁর বিচার হবে। সে ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘জালিয়াতির কারণে ভারতের আইনে তাঁর বিচার হবে। তিনি মিথ্যা নগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ, জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু, আমাদের এখানে অর্থপাচারের মামলাটা বিচারাধীন রয়ে গেছে। সেই মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে তাঁকে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আশা করি, দ্রুততম সময়ে তাঁকে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সরকারি ছুটি শেষে আগামীকাল এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাঁর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সংস্থাগুলো আছে তাঁরা তৎপর। তাঁদের তৎপরতার কারণে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। অচিরেই তাঁকে বাংলাদেশে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। শাস্তি শুধু জেল না, অন্যান্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্জিত পি কে হালদারের যে সম্পদ, সেটা বাজেয়াপ্ত করা হবে। জনগণের টাকা জনগণকে ভাগ করে দেওয়া হবে। তিনি ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাঁর পক্ষে যত ধরনের অন্যায় করা সম্ভব ছিল, তিনি তা করেছেন এবং টাকাগুলো সরিয়ে ফেলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অর্থপাচারের মামলায় প্রথম বাইরে থকে কোনো বাংলাদেশিকে ধরা হলো। আরও যাঁরা পালিয়ে গেছেন, তাঁদের সবাইকে ভবিষ্যতে ধরা হবে।’
ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গতকাল শনিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় সে দেশের তদন্ত সংস্থা ইডি কর্মকর্তাদের ম্যারাথন জেরার মুখে ভেঙে পড়েছেন প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। পি কে হালদার ইডি কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, তিনি ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে, নিজের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার বলে পরিচিত সুকুমার মৃধার কারণেই তিনি ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগর, রাজারহাট-নিউটাউন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়সহ বেশ কিছু জায়গায় পি কে হালদারের বিপুল সম্পত্তির হদিস পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ২০০ কোটি রুপির কাছাকাছি সম্পদের হদিস আপাতত মিলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিপুল অর্থ মূলত বাংলাদেশ থেকে হুণ্ডির মাধ্যমেই পাচার করা হয়েছিল। কাদের মাধ্যমে এ অর্থ ভারতে নেওয়া হয় এবং সে অর্থ লিকুইড মানি, না কি স্বর্ণের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল, সে বিষয়টিও নজরে রাখছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিপুল অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মাছের কারবারের আশ্রয় নিয়েছিলেন পি কে হালদার। জেরার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন ইডি কর্মকর্তারা।
তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর ইডি কর্মকর্তারা ম্যারাথন জেরার মুখে রেখেছেন গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের। সময় যত এগোচ্ছে, ততই ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছেন পি কে হালদার। তবে, ইডি কর্মকর্তারা জেরা করে ভারতে পি কে হালদারের গডফাদার কে, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
ইডি সূত্রে খবর, পি কে হালদার জেরার মুখে বারবার ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার কথা বলছেন। সে ভুল পথ কী এবং কে বা কারা তাঁকে সে পথে পরিচালিত করেছেন, তা জানতেই এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে, গ্রেপ্তার স্বপন মিত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা মিত্র এবং উত্তম মিত্রের স্ত্রী রচনা মিত্র দাবি করেছেন—তাঁদের স্বামীরা সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন।