বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ঢাকা-বরিশাল রুটে নাব্যতা সংকট

ঢাকা-বরিশাল রুটে নাব্যতা সংকট

শামীম আহমেদ:

ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একটি চ্যানেল। বিকল্প চ্যানেল হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীবাহি লঞ্চগুলোকে। তারমধ্যে বরিশাল নৌ-বন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে পলি জমে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে গত কয়েকদিন থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতেই আটকে যাচ্ছে ঢাকাগামী যাত্রীবাহি লঞ্চ। নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে তিন ঘন্টা বিলম্বে ঘাট ত্যাগ করতে হচ্ছে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। এমন পরিস্থিতিতে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো।

বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা (যুগ্ম পরিচালক) আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, খুব শীঘ্রই ঢাকা-বরিশাল নৌরুট নিরাপদ করে তুলতে চ্যানেলগুলোতে ড্রেজিং কার্যক্রমের মাধ্যমে নাব্যতা সংকট দূর করা হবে।

জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চবাসীর রাজধানী ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। রাত্রীকালিন নৌ-ভ্রমন আরামদায়ক বিধায় নৌরুটের বিলাশবহুল লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের পদচারনাও বেশি। কিন্তু চলতি মৌসুমে নাব্যতা সংকটের কারনে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-বরিশাল নৌপথ। এমনকি নাব্যতা সংকটের কারনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সহজ ও নিরাপদ নৌরুটগুলো।

ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাশবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মাস্টার আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে বরিশাল নদী বন্দর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্ট নাব্যতা সংকটের কারনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব পয়েন্ট হয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতে গিয়ে কখনো কখনো দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নাব্যতা সংকটের কারনে ইতোমধ্যে মিয়ারচর চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই মাস ধরে ওই চ্যানেল হয়ে লঞ্চ চলাচল করতে পারছেনা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে মিয়ারচর চ্যানেলের প্রবেশ মুখে একটি বাল্কহেড ডুবে যায়। সেটি উদ্ধার না করায় চ্যানেলটির বিভিন্ন পয়েন্টে পলি মাটি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। এ কারনে বিকল্প চ্যানেল মেঘনার উলানীয়া-কালিগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছতে দুই ঘন্টা সময় বেশি লাগার পাশাপাশি কমপক্ষে তিন ব্যারেল (ছয়শ’ লিটার) তেল বেশি লাগে। বর্তমানে বিকল্প ওই চ্যানেলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একসময়ের উত্তাল ওই চ্যানেলটির প্রায় একশ’ মিটার এলাকাজুড়ে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ দুই মিটার পানি থাকছে। অথচ যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো চলাচলের সময় তলদেশ অন্তত দুই মিটার পানিতে ডুবে থাকে। এ কারনে ওই চ্যানেলে মাটি ঘেষে লঞ্চ চলাচল করতে হয়। তারমধ্যে ওই চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ চ্যানেলটিও বন্ধ হয়ে গেলে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চগুলোকে চলাচল করতে হবে ভোলার ইলিশা হয়ে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছতে আরও এক ঘন্টা সময় বেশি লাগবে। বেড়ে যাবে জ্বলানি খরচও।

অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বাউশিয়া-নলবুনিয়া চ্যানেলে ইতিপূর্বে ৭-৯ মিটার পর্যন্ত পানি থাকতো। বর্তমানে ওই চ্যানেলে জোয়ারের সময় দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকছে। আর ভাটার সময় থাকে মাত্র এক মিটার পানি। যে কারনে ভাটার সময় বড় নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। বাকিটা পলি মাটি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে।

একই অবস্থা বরিশাল শহরের উপকন্ঠ শায়েস্তাবাদের কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁসহ তিন নদীর মোহনায়। সেখানে পলিমাটি জমে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন নদীর ওই মোহনায় ভাটার সময় চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই নৌ-যানগুলো আটকে যাচ্ছে।

ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাস্টার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে বরিশাল লঞ্চ ঘাটেও নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রায় প্রতিরাতেই যাত্রীবাহি লঞ্চ ঘাটে আটকে যাচ্ছে। জোয়ারের অপেক্ষায় অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ২৬ অক্টোবর রাতে এক সাথে দুটি লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এ্যাডভেঞ্চার-৯ বরিশাল নৌ বন্দরে আটকে যায়। যে কারনে রাত নয়টায় লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। রাত ১০টার পরে জোয়ার আসলে একে একে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। তাছাড়া ২৭ অক্টোবর রাতে আটকে যায় এমভি মানামী লঞ্চ। জোয়ারের অপেক্ষায় থেকে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘন্টা পরে ঘাট ত্যাগ করে ওই লঞ্চটি। এনিয়ে যাত্রীদের সাথে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের তুমুল বাকযুদ্ধ লেগেই রয়েছে।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বরিশাল নৌ বন্দরের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যেই পল্টুনে কোন লঞ্চই বার্দিং করতে পারবেনা। এমনকি বার্দিং করলেও সিডিউল অনুযায়ী যাত্রীবাহি লঞ্চগুলো চলাচল করতে পারবে না। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি এবং লঞ্চ চলাচল চরমভাবে ব্যহত হবে। তাই নাব্যতা সংকট নিরসনে দ্রুত ড্রেজিং কার্যক্রম চালুর দাবি করেছেন লঞ্চের মাস্টাররা।

এদিকে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে নাব্যতা সংকট সৃষ্টির জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র অপরিকল্পিত ডেজিং ব্যবস্থাকেই দায়ি করছেন লঞ্চ মালিক এবং মাস্টাররা। এর কারন উল্লেখ্য করে তারা বলেন, মাত্র এক বছর আগে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্যোগে নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে। কিন্তু বছর শেষ না হতেই যেসব চ্যানেলে ড্রেজিং করা হয়েছে তাতে আবার পলি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। কেননা ড্রেজিংয়ের বালু যেস্থান থেকে কাটা হচ্ছে তা আবার এক থেকে দেড়শ’ মিটার দুরেই ফেলা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের বালু নদীতে না ফেলে অন্যত্র সরিয়ে ফেললে বছর বছর এ সমস্যার সৃষ্টি হতোনা।

নাব্যতা সংকটের বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকে। এ কারনে কিছু কিছু পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং ব্যবস্থাও চালু করেছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই এ সমস্যা সমাধান হবে। যেসব পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতা কমে গেছে সেসব পয়েন্টে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং এর বালু নদীতে ফেলা ছাড়া কোন উপায় নেই। কেননা যে পরিমান বালু কাটা হয় তা স্থলে ফেলাবার মতো জায়গা নেই। এ কারনে বিগত বছরেও আমরা ঘোষনা দিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছিলাম যে কারোর নিন্মজমি থাকলে তা বিনামূল্যে ড্রেজিংয়ের বালু দিয়ে ভরে দেয়া হবে। এবারও সেই একই ঘোষনা থাকবে। কিন্তু কেউ বালু না নিলে সেক্ষেত্রে নদীতে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech