ডেস্ক রিপোর্ট :
অস্থির চালের বাজারে মিলমালিক-আমদানিকারক এবং করপোরেট হাউসের যৌথ সিন্ডিকেটের হানা। তিন দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় দাম সাড়ে তিনশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ ধানের ভরা মৌসুমের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাজার। উত্তরের বিভিন্ন মিল ও গুদামে মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে মোকাম কিংবা পাইকারি বাজারে চালের কোনো সংকট নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থাও পুরোপরি স্বাভাবিক। তারপরও অস্থির দেশের চালের বাজার। শুধু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে গত তিন দিনে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা চালে সাড়ে তিনশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রামের আশপাশের জেলাগুলোতে সিদ্ধ চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও বাড়ানো হয়েছে লাগামহীনভাবে। তিন দিন আগে মোটা ইরির ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ২ হাজার টাকা। আজ শনিবার বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৩৫০ টাকা। একইভাবে মিনিকেট সিদ্ধ চাল ৫০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৫০ টাকা। জিরাশাইল বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
শুধু অজুহাতের ওপর ভর করে বাড়ানো হয়েছে আতপ চালের দামও। বিশেষ করে বেথি কিংবা কাটারি আতপের বস্তায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়লেও চিনিগুড়া চালের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় এক হাজার টাকা করে। তিন দিন আগে কাটারি আতপ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। আর চিনিগুড়া চাল পাঁচ হাজার টাকা থেকে এক লাফে হয়ে গেছে ছয় হাজার টাকা।
যদিও ব্যবসায়ীরা সব দায় চাপাচ্ছেন জ্বালানি তেলের ওপর। তাদের দাবি, তেলের দাম বাড়ার কারণে উত্তরের জেলাগুলো থেকে চালবহনকারী প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া বেড়ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। কিন্তু, সে অনুযায়ী প্রতি বস্তা চালে দাম বাড়ার কথা ৫০ টাকারও কম। কিন্তু তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে প্রতিদিনই বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা করে বাড়িয়ে দিচ্ছেন মিল মালিকরা।
তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে পাহাড়তলির মেসার্স হক রাইস এজেন্সির মালিক এস এম দিদারুল হক সরকারের মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিতে বললেন। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত চাল আছে। আমদানিও করা হচ্ছে। মিল মালিকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
তবে মিল মালিক-আমদানিকারক এবং করপোরেট গ্রুপগুলোর সিন্ডিকেট কারসাজির মুখে ভরা মৌসুম সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়তে এই ত্রিপক্ষীয় জোট চালের মজুত করে তুলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি, শুল্ক কমিয়েছে, বাজারে অভিযানসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি সুফল মেলেনি। সরকার অক্টোবরের মধ্যে ১০ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও এখন পর্যন্ত চাল এসেছে মাত্র ৩৫ হাজার মেট্রিক টন।