নিউজ ডেস্ক:
দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খোকা ‘মুমূর্ষু’ অবস্থায় আছেন। তিনি দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, জীবনের শেষ বেলায় খোকা দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।
এদিকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ মেয়র খোকার সংকটাপন্ন অবস্থার কথা জেনে ফেসবুকে আবেগময়ী ‘চিঠি’ লিখেছেন বিএনপির রাজনীতিতে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত মির্জা আব্বাস।
‘প্রিয় খোকা’কে লেখা চিঠিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নিজেদের মধ্যে দূরত্বের কথা যেমন লিখেছেন তেমনি আবার একসঙ্গে পথচলার আশাও প্রকাশ করেছেন।
চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে দেশ ছাড়েন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। বিদেশে থাকা অবস্থায় দুটি মামলায় তার সাজা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় দুই যুগ ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পরের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস। তাদের বিরোধের খবর প্রায়ই খবরের শিরোনাম হতো। তাদের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতও হয়েছে বিস্তর।
খোকার প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়ে ফেসবুকে খোলা চিঠিতে মির্জা আব্বাস লিখেছেন- ‘প্রিয় খোকা, এই মাত্র আমি খবর পেলাম যে, তোমার শরীর খুব খারাপ। তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ, এই কথাটুকু কারও সঙ্গে শেয়ার করব, সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি-আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে।’
নিজেদের বহুল আলোচিত বিরোধ নিয়ে মির্জা আব্বাস লিখেছেন- ‘তোমার আর আমার দীর্ঘ এই পথচলায় কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিস্বার্থে তোমার আর আমার মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিল। তবে তুমি আর আমি কেউই সেই দূরত্বে রয়েছি বলে আমি কখনোই মনে করিনি।’
খোকার পাশে না থাকতে পারায় আক্ষেপ করে মির্জা আব্বাস লিখেছেন- ‘আমি জানি না, তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে কি-না? আমার এই লেখাটি তোমার চোখে পড়বে কি-না বা তুমি দেখবে কি-না, তাও আমি জানি না। তবে বিশ্বাস কর, তোমার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানবার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেন যেন ভেঙে আসছে। আমি বারবার অশ্রুসিক্ত হচ্ছি।’
খোকার আরোগ্য কামনা করে চিঠির ইতি টেনেছেন মির্জা আব্বাস। লিখেছেন- তুমি আর আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করে যাব। না হয় সেই আগের মতোই স্বার্থপর কোনো মানুষদের জন্য আব্বাস আর খোকা বাইরে বাইরে দূরত্বের সেই অভিনয়টা করে যাবে, আর ভেতরে থাকবে দু’জনের প্রতি দু’জনের অন্তর নিংড়ানো ভালোবাসা। আল্লাহ তোমার সুস্থতা দান করুক। তুমি ফিরে এসো খোকা, তুমি ফিরে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকব।
জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি হন খোকা। গত সোমবার তার শ্বাসনালি থেকে টিউমার অপরাসরণ করা হয়েছে।
খোকার ছেলে বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন জানান, মঙ্গলবার থেকে তার বাবার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে।
খোকাকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার বরাতে দলটির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, হাসপাতালে শয্যাশায়ী খোকা বলেছেন, ‘জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের মাটি থেকে বিদায় হবে কি-না আল্লাহ জানেন।’
খোকার আরোগ্য কামনায় শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও ঢাকার সূত্রাপুর-কোতোয়ালি এলাকার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।