জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জিপি (সরকারি কৌঁসুলি) এবং পিপিদের (পাবলিক প্রসিকিউটর) জন্য আয়োজিত ২১তম বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে একজন যুগ্ম-জেলা জজ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আইনটি সংশোধন হলে যুগ্ম-জেলা জজের পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজরাও এই মামলাগুলোর বিচার করতে পারবেন। এতে করে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে।
খালেদা জিয়ার জামিন আদালতের বিষয়
খালেদা জিয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করার কারণে প্রথমে বিচারিক আদালতে এবং পরে উচ্চ আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন। আবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এখানে সরকারের প্রতিহিংসার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তার জামিনের বিষয়টিও আদালতের এখতিয়ারে। সরকারের এখানে হস্তক্ষেপ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি বলেন, বিএনপি আমলে আদালতকে যেভাবে নিজেদের পকেটে রাখা হতো সেই অবস্থা এখন আর নেই। বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন।
এর আগে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একসেস টু জাস্টিসকে বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে জিপি-পিপিদেরকে সেবার মানসিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা পালন করে আদালতের মামলা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রায়শ শোনা যায় কোনো কোনো জিপি-পিপি বিভিন্ন অজুহাতে আদালতে সময়ের দরখাস্ত দাখিল করে থাকেন, যা মোটেই ঠিক না। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অবশ্যই আদালতের সময় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আদালতে সঠিক সময়ে সাক্ষী হাজিরসহ নির্ধারিত তারিখে সাক্ষী পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ঢিলেঢালা বা গড়িমসি মনোভাব কাম্য নয়।
মামলার জট কমিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেওয়ানি কার্যবিধি এবং অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুতবিচার নিষ্পত্তির সহায়ক আইন করা হয়েছে। জিপি-পিপিদেরকে এ আইনের বিধানগুলো অনুসরণ করতে হবে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণসহ আইনজীবীদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে।
তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিচার বিভাগকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে সরকার এরইমধ্যে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং রূপকল্প-২০২১ এর লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে।
সরকার সরকারি কৌঁসুলি এবং পাবলিক প্রসিকিউটেরদের সার্ভিসকে একটি সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় এনে যুগোপযোগী করার কথা ভাবছে। খুব সহসাই সরকার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আইন সচিব মো. গোলাম সাওয়ার বলেন, বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসাবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি সব বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জিপি-পিপিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার শুধু করলেই হবে না, সেটি অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। সরকার এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়েই জিপি-পিপিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নতুন নতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচারকদের পাশাপাশি সরকারি আইন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।