দুই মাস ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন নন্দিত এই শিল্পী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এরপর থেকে নিয়মিত কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে তাকে। একটু একটু করে সেরে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু মন খারাপের খবর হলো, গত এক সপ্তাহ থেকে তার শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে। প্রিয় এই মানুষটিকে নিয়ে চিন্তিত তার পরিবার। এমনটাই জানিয়েছেন এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য মোমিন বিশ্বাস। দেশ থেকে নিয়মিতই গুরুর খোঁজখবর রাখেন তিনি।
রোরবার রাতে এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে মোমিন লিখেছেন, ‘কিশোর দা, সারাদিনে যতবার ফোনের ওপাশ থেকে আপনার কণ্ঠটা শুনি আমার কান্না আসে, অঝোরে লুকিয়ে কাঁদি, গোপনে কান্না মুছে বারবার সোজা হয়ে দাঁড়াই, আবার থেমে যাই, দিন যায় মাস যায়। কতদিন দেখি না, কতদিন সকালে ঘুম ভাঙিয়ে রেয়াজে কেউ বসায় না, কতদিন আদর শাসন আর স্নেহমাখা বকা খাই না! সঙ্গা, সপ্তকের মতো এতটা ভালোবাসা এতো স্নেহ আর আদর না দিলেও হয়তো পারতেন। আপনার সুস্থতা চাওয়া ছাড়া পৃথিবীতে এই মুহুর্তে আর কোনো চাওয়া নেই।’
এন্ড্রু কিশোরের বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হলে মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক থেকে ভালো নেই দাদা। চিকিৎসকরা নতুন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছেন। এখনো রিপোর্ট এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া রোববার তাকে এক ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে।’
মোমিন বিশ্বাস জানান, এ পর্যন্ত তিনটি সাইকেলের কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে চতুর্থ সাইকেলের কেমোথেরাপি। প্রথম তিন সাইকেলে ১২টি ও চতুর্থ সাইকেলে দুটি মোট ১৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া শেষ হয়েছে। চতুর্থ সাইকেলের আরও দুটি থেরাপি বাকি। এরপর আরও দুটি সাইকেল সম্পন্ন করতে হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি দিতে হবে দাদাকে। মোটি ১০টি কেমোথেরাপি দেওয়া বাকি এখনো!
এন্ড্রু কিশোরের প্রত্যেকটি কেমোর জন্য লাগছে ৯ লাখ টাকা। এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় এক কোটিরও বেশি টাকা খরচ করেছে তার পরিবার। এরই মধ্যে চিকিৎসার খরচ জোগাতে নিজের রাজশাহী শহরে ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করে দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। এছাড়া কিংবদন্তি এই শিল্পীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি সংগ্রহ হয় ৫০ লাখ টাকা। প্রয়োজন আরও অনেক টাকা।
এর মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন ফরিদুর রেজা সাগর, সৈয়দ আব্দুল হাদী, হানিফ সংকেত, সাবিনা ইয়াসমীন, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, জেমস, অনন্ত জলিল, মমতাজ বেগম, মেয়র আতিকুল ইসলাম, বাদল রায়, দিলারা আলো, কবির বকুল, দিনাত জাহান মুন্নি, চন্দন সিনহা, পলাশ সাজ্জাদ, দিঠি আনোয়ার, জলের গান প্রমুখ।
শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন, সাউন্ডটেক, অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়া, ক্রিশ্চিয়ান হাউজিং সোসাইটিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পীর চিকিৎসা সহায়তার জন্য ১০ লাখ টাকা দেন।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। তার গাওয়া শত শত গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে, পড়ে না চোখের পলক ইত্যাদি।