ডেস্ক রিপোর্ট :
রাত পোহালেই খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শুরু। সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) নেওয়া হবে ভোট। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা আছে দুই সিটি। ইসির বিশ্বাস, গাজীপুরের চেয়ে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘ভালো’ হবে।
সোমবারের ভোটে নির্ধারণ হবে দুই নগরপিতা। এ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই দুই সিটির ভোটারদের।
গত ১৬ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের মাধ্যমে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। আজ সোমবার (১২ জুন) ভোটগ্রহণের পর মেয়র নির্বাচনের পাশাপাশি নির্বাচিত হবেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও।
নির্বাচনি মাঠে মোতায়েন আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কেন্দ্র পাহারায় মোতায়েন আছে ১৬ থেকে ১৭ জনের ফোর্স। মাঠে নির্বাচনি আচরণ প্রতিপালনে নিয়োজিত রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া রয়েছে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিম। নির্বাচন ভবনেও গঠন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবেন নির্বাচন কমিশনাররাও।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টির (জাপা) শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল হাতপাখা প্রতীকে ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন গোলাপ ফুল প্রতীক এবং এস এম শফিকুর রহমান টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবার খুলনা সিটিতে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২২ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮২৮ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪ জন। ভোটগ্রহণ করা হবে ২৮৯টি কেন্দ্রের এক হাজার ৭৩২টি বুথে। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনি এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ১১ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১৬টি টিম, পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ৪৯টি টিম।
অন্যদিকে, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন, হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান ও হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন ১৫৮ জন প্রার্থী। সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ১১৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৪২ জন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। মোট ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনি এলাকায় ৩০ জন নির্বাহী ও ১০ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তারা নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন ও বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০ প্লাটুন বিজিবি, তিন সেকশন কোস্টগার্ড, র্যাবের ১৬টি টিম, পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ৪৩টি টিম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এবং নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোটের দুদিন পর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। ভোটের দিন সীমিত থাকবে যন্ত্রচালিত যান চলাচল। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সবধরনের মিছিলের ওপরও। সবার ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ভোটের এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
দুই সিটির ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, ‘খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে। অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে অতীতের চেয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনের বিধি-বিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল, খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা সুতীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিনও আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব।’