ডেস্ক রিপোর্ট :
এক বছর আগেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রা মানেই ছিল পদ্মা পারাপারে ফেরিঘাটের ভোগান্তি। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি দেখা দিত রাত নামলে। তবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে সব হিসেবনিকেশ। উদ্বোধনের বর্ষপূর্তির লগ্নে যাতায়াতকারীরা বলছেন, শুধু দিনের ভোগান্তি লাঘবই নয়, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঁধার রাতের যাতায়াতকে করেছে ভয়হীন। দিনে-রাতে এখন সমান গতিতে বাধাহীন ছুটে চলায় উছ্ছ্বাস সবার।
রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গে যাত্রা মানেই ছিল পদ্মা নদী পারাপার আর ফেরিঘাটের সীমাহীন ভোগান্তি। উত্তাল ঢেউ, বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে ফেরি বন্ধে হাজারো যাত্রীকে বিপাকে পড়তে হতো প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে বড় বিপত্তি ছিল রাত নামলে, পারাপারের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকা যাত্রীদের রাত কাটতো ভয় আর নানা শঙ্কা নিয়ে। কমে আসতো যাতায়াতের গতি। তবে সেসব এখন অতীত। পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট।
ঢাকা থেকে শরীয়তপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী জীবন সরকার বলেন, ঢাকায় বড় ভাইর ব্যবসার সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করি। বিভিন্ন প্রয়োজনেই সপ্তাহে দুই-একবার বাড়ি যেতে হয়। সেতু দিয়ে সহজেই যখন-তখন যেতে পারি। আমরা চেষ্টা করি নিয়ম মেনেই নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। সবাই সবাইকে উৎসাহ দেই নিয়ম মানার জন্য। যেন আর কখনও সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না হয়।
একই কথা জানান আরেক আরোহী মো. আশরাফ। তিনি বলন, মোটরসাইকেল চলতে দেওয়ায় এখন নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করি। ছোট প্রয়োজনেও যাতায়াত করি। কারণ এখন ভোগান্তি নেই। আর মোটরসাইকেল সাশ্রয়ী ও যাতায়াত সহজ। একই কথা জানান আরও বেশ কয়েকজন। তাদের মতে, এখনো যারা নিয়ম অমান্য করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
ঢাকায় পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সানজানা আক্তার রাত্রি বলেন, আমি মাদারীপুরের শিবচরে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আগেভাগেই যাচ্ছি। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ১২-১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো শিমুলিয়া ঘাটে। তারপর লঞ্চ ফেরি অথবা স্পিডবোটে পাড়ি দিতে গুণতে হতো অতিরিক্ত টাকা। এখন দুই ঘণ্টার মধ্যেই বাড়ি যেতে পারছি, ভোগান্তি নেই। পদ্মা সেতু আমাদের পদ্মার ওপারের মানুষের জন্য আশীর্বাদ।
ট্রাকচালক মজিদ ফরিদপুর থেকে ঢাকা যাবেন গরু নিয়ে। মজিদ বলেন, বারোটা গরু নিয়া ঢাকায় যামু। প্রতি বছরই গরু নিয়ে আসি। আগেতো বাংলাবাজার ঘাটে আইসা ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করতে হতো ফেরির জন্য। এখন তো পদ্মা সেতু দিয়া সরাসরি চলে আসছি, গরু নামায়া দিয়া আবার গরু আনতে যাব। কোথাও অপেক্ষা করতে হইবো, এটাই তো মাথায় চিন্তা আসে না।
বাস মালিক রোমান মিয়া জানান, আগে ঢাকা-মাওয়া রোডে ঢাকা-মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বাস চলাচল করতো। যাত্রীরা ঢাকা থেকে এসে ঘাটে অপেক্ষা করতো লঞ্চ-ফেরির জন্য। আমাদেরও অনেক সময় খালি গাড়ি নিয়ে ঢাকায় যেতে হতো। তবে এখন ঢাকা-কুয়াকাটা ঢাকা-বরিশাল রোডে আমাদের গাড়ি চলে। কোথাও অপেক্ষা করতে হয় না। যার জন্য অনটাইমে গাড়ি যেতে আসতে পারছে। দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের জন্য পদ্মা সেতু আশীর্বাদ।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, দিনরাত পুলিশ পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করছে। এখন জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নিরাপত্তা দিচ্ছি। দিনের চাইতে রাতে পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক (পদ্মা সেতু সাইট অফিস) মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, যানবাহনের শৃঙ্খলা আর যাত্রীদের নিরাপত্তায় রাতের বেলা বিশেষ তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের সতর্ক থাকার আহ্বান তাদের। এদিকে দ্রুতই টোল প্লাজায় চালু করা হবে অটোমেটিক টোল সিস্টেম (ওটিসি)।
প্রথম বছরে পদ্মা সেতু দৈনিক টোল আদায় হয়েছে গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি। বছর ঘুরে সর্বমোট প্রায় ৮০০ কোটি টাকার টোল আদায় করা হয়েছে।