ডেস্ক রিপোর্ট :
আজ ১৫ নভেম্বর। এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। যে ঘোষণায় জানা যাবে–কবে হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চূড়ান্ত হয়েছে ভাষণের খসড়া। যদিও এদিন ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপি ও তাদের সমমনাদের পঞ্চম দফার অবরোধ।
ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চলছে প্রশিক্ষণ। কেন্দ্রের অধিকাংশ সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে জেলায় জেলায়। প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো। গতকাল মঙ্গলবার জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল। সেই দাবিতেই চলছে তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম।
এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার আসতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার জন্য আজ বুধবার বিকেলে কমিশন সভার আহ্বান করা হয়েছে। সভা শেষে সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই তফসিল ঘোষণা করতে পারেন সিইসি।
এই যখন অবস্থা, তখন তফসিল ঘোষণার দুদিন আগে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু চিঠি দিয়েছেন। তবে, এ চিঠি তফসিল ঘোষণায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর। যদিও তিনি জানান, ডোনাল্ড লুয়ের চিঠিতে সংলাপের বিষয় আছে কি না, কমিশন তা ‘অবগত নয়’।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হোক, প্রতিকূল হোক—নির্বাচন করতেই হবে। আমাদের সব সময় প্রত্যাশা, পরিস্থিতি যত বেশি অনুকূল হবে, নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজসাধ্য হবে। আমরা সব সময় প্রত্যাশা করে আসছি, এখনও প্রত্যাশা করব—সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমরা ম্যাক্সিমাম অপটিমাইজেশন চাই। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন হবে না—এ ধরনের কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল ধারণা) জনগণের মধ্যে যেন না থাকে, সেজন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই—নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে বিষয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
ইসি সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইসির বৈঠকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য মঙ্গলবারর সকাল ১১টায় সিইসির অফিস কক্ষে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তফসিল ও ভোট কখন হবে—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতির উদ্দেশে সিইসির ভাষণের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এ সময় ভোটগ্রহণের জন্য আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, বেশি আলোচনায় রয়েছে ৬ জানুয়ারি। যদিও নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে, ভাষণের আগেই নির্ধারিত কিছু বলা কঠিন।
অতীতে সব নির্বাচনে ইমি থেকে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করে তা বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে সন্ধ্যায় সম্প্রচার করা হতো। এবার সিইসির ভাষণ লাইভ সম্প্রচার হবে কি না, জানতে চাইলে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাল সকাল ১০ টায় জানিয়ে দেব।’
সংবিধানের ১২৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরের নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেই হিসাবে আগামী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অর্থাৎ, গত ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেছে।
চারিদিকে যখন এতো তোড়জোড়, তখন আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবন ও এর আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কমিশন ভবনে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পরপরই শুরু হবে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’। নির্বাচনি ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’ বহাল থাকবে।
‘নির্বাচন পূর্ব সময়’ সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের অবশ্য কর্তব্য। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। এ সময়ে বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হবে এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার বিধি-৩ অনুসারে যেকোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন বন্ধ হয়ে যাবে।