ডেস্ক রিপোর্ট :
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব আর ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দর আবার কমতে শুরু করেছে ফরিদপুরের বাজারগুলোতে। গত দুই দিনের ব্যববধানে নতুন পেঁয়াজের দর কমেছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে।
আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) জেলা শহর ও আশপাশের বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি প্রকারভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। যা গত দু-তিন দিন আগে এই বাজারগুলোতে মুড়িকাটা (নতুন) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ এবং দেশি (পুরোনো) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা পর্যন্ত।
সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমের’ প্রভাবে টানা তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে এ জেলার পেঁয়াজের ক্ষেতগুলোতে পানি জমে যায়। এতে চাষিরা নতুন পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তুলতে পারেনি। অন্য দিকে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বন্ধের খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দর বাড়িয়ে দেয়।
হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে জরিমানা করা হয়।
জেলার পেঁয়াজ চাষিরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় মাঠে নামতে পারছে না তারা। তবে ভালো রোদ হলে কয়েক দিনের মধ্যে আবার পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ বাজারে তোলা সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার তিন ধরনের পেঁয়াজের আবাদ হয়। এর মধ্যে শীতকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজ, গ্রীষ্মকালীন হালি পেঁয়াজ এবং দানা পেঁয়াজ। এ তিন ধরনের পেঁয়াজের মধ্যে হালি পেঁয়াজ বেশি আবাদ হয়। তিনি বলেন, জেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল শীতকালীন এই পেঁয়াজটি। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল লক্ষাধিক টন।
এদিকে আজ দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে পেঁয়াজের দাম কমে আসে মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। জেলার সদর উপজেলার মোমিনখার হাটে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষে জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের খবরে আড়তে যে পেঁয়াজ মণপ্রতি রবিবার চার হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয় আজ তা বিক্রি হয় তিন হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকায়। গতকালের তুলনায় আজ মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কম। প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং খুচরা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সব পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ দুপুরে মোমিনখার হাটে পেঁয়াজের আড়তে মূল্য তালিকা ও পাকা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না থাকায় জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ-উল মাহমুদ নওশাদ ট্রেডার্সকে এক হাজার টাকা এবং জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ সেলিম স্টোরকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. বজলুর রশিদ খান, জেলা পুলিশের দুটি দল উপস্থিত থেকে অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করে।
আজ জেলা শহরের হাজী শরীয়তউল্লাহ বাজারে পুরোনো পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং খুচরা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম অনেকটাই কমতে শুরু করেছে।