ডেস্ক রিপোর্ট :
গত এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো। সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। আজ শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়া তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭%। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় তিন কিলোমিটার।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আসাদুর রহমান আসাদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কনকনে শীতে দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা থেকে সারারাত বৃষ্টির মতো টিপ টিপ করে ঝরছে কুয়াশা। সাত দিন ধরে ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠা-নামা করছে।
কনকনে শীতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বেশি বিপাকে পড়েছে। প্রচণ্ড শীতে গরম কাপড়ের অভাবে তারা সকালে কাজে যেতে পারছে না। সেই সঙ্গে রোজগার না থাকায় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পরিবার নিয়ে।
এদিকে দিনের বেলায়ও যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর শিশু হাসপাতাল, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল এবং এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দিনাজপুর শিশু হাসপাতাল গত তিন দিনে তিন শতাধিক শীতজনিত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মশিউর রহমান বলেছেন, শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় থাকলে শিশুদের রোগবালাই কম হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের শীতজনিত রোগ হলেই হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মশিউর রহমান আরও বলেন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সামনের আরও কয়েকদিন শীতের তীব্রতা বাড়বে। এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় আকাশ মেঘলাসহ ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকবে।
দিনাজপুর জেলা দার্জিলিংয়ের খুব কাছে হওয়ায় বরাবরই শীতের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। এবারও তার পরিবর্তন হয়নি।
নীলফামারী থেকে এনটিভি প্রতিনিধি ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন জানান গত তিন দিন ধরে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জবুথবু নীলফামারীর জনজীবন। তিন দিনে একটি বারের জন্যও সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। ঘন কুয়াশায় সকাল ১১টা পর্যন্ত দৃষ্টিসীমা কম থাকায় সৈয়দপুরগামী তিনটি উড়োজাহাজ ঢাকার হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেনি।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। কুয়াশা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ১১টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দৃষ্টিসীমা ৮০০ মিটার থাকায় সূচি অনুযায়ী তিনটি ফ্লাইট অবতরণ করেনি। রানওয়েতে ফ্লাইট উঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় দৃষ্টিসীমা দুই হাজার মিটার।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব ঘোষ বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কম থাকায় সকালের দিকে বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে সকাল থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সূচি অনুযায়ী ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী ফ্লাইটগুলো চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা কাজের সন্ধানে বের হলেও মিলছে না কোনো কাজ। আর্থিক কষ্টে পরিবার নিয়ে চলতে হচ্ছে।
ভ্যানচালক কান্দের আলী বলেন, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৬০ টাকার ভাড়া মেরেছি। এখনও চালের টাকাও আয় হয় নাই। এভাবে সংসার চলবে কীভাবে?
দিনমজুর নুর মোহাম্মদ বলেন, সকাল হতে ঘুরে বেড়াচ্ছি কোনো কাজ পাচ্ছি না। গতকালও কাজ ছিল না।
মুদি দোকানদার সৈকত ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে কোনো বিক্রি নাই। মানুষ বাড়ি থেকে কম বের হচ্ছে। তাই বিক্রিও কমে গেছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোঘ জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্তদের জন্য নতুন করে আরও কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক আজ সকাল ৯টায় জানিয়েছেন রংপুর বিভাগের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সব থেকে কম তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরই সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি, ডিমলায় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।