নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ৬ তলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা ঘোষণা করেন তিনি।
একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন, সেসব রাজাকারের তালিকার প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয় রোববার।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনারা অবগত আছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘ ৯ মাস তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি বাহিনীর সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিদের হত্যা করেছে। একই সঙ্গে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে।
স্থানীয় এসব দোসররা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা না করলে এ হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার সংঘটিত হতো না। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ও ত্বরান্বিত হতো। এসব সহযোগীদের অনেকেই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করব। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরোনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হলো। এ তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে www.molwa.gov.bd পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম এবং ওই সময়ে বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। যাচাই বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংরক্ষণাগারে মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা দালিলিক প্রমাণাদি রয়েছে, ওই সময়ের সংরক্ষিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে আমরা আবারও তাদের অনুরোধ করবো, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেই সময়ের তথ্যাদি পাঠিয়ে সহযোগিতা করবেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা ও নথিসমূহ বিভিন্নভাবে নষ্ট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার স্বাধীনতাবিরোধীদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধ পরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে জানাতে আজকের এ তালিকা প্রকাশ। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যদি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে আজকের এ তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের বিচারের দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করি।