বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

সদরঘাটে শেষ সময়ে ভিড়

সদরঘাটে শেষ সময়ে ভিড়

ডেস্ক রিপোর্ট :
পাল্টে গেছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত লঞ্চঘাট সদরঘাটের চিত্র। ঈদের সময় সদরঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরগুনার লঞ্চ ছাড়ত। কিন্তু এ বছর চিত্র ভিন্ন। সবধরনের প্রস্তুতি থাকলেও লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কম। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো যাত্রী নিয়ে চাঁদপুরের উদ্দেশে আধাঘণ্টা পরপর লঞ্চ ঘাটে ভিড়ছে। ঈদ উপলক্ষে এই রুটে ২৪টি বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করছে।

আজ সোমবার (৮ এপ্রিল) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এ চিত্র দেখা যায়। বরিশাল, ভোলা ও চাঁদপুর যাওয়া জন্য ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিলাসবহুল লঞ্চ। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ওঠানোর হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। ঈদযাত্রা শুরুর পর থেকে আজ যাত্রীর চাপ তুলনামূলক অনেক বেশি।

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কর্মব্যস্ত ঢাকা শহর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। সড়ক, রেল, আকাশ ও জলপথে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন তারা। তবে গত দুই বছরের তুলনায় ঢাকার সদরঘাটে এবারের বাড়ি ফেরার চিত্র একটু ভিন্ন। কেননা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বরিশাল অঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমায় সদরঘাটের চেনা রূপ অনেকটাই হারিয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির সঙ্গে ফিরেছে চেনা সেই ভিড়।

সদরঘাটে লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর প্রভাব না থাকায় চাঁদপুর রুটে শিডিউল অনুযায়ী চলছে লঞ্চ। ভোলা অঞ্চলের লঞ্চগুলোতে দুপুর থেকে ভিড় করেছে যাত্রীরা। সকাল থেকে ভোলার বিভিন্ন রুটে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাকি লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদযাত্রার শুরুর পর থেকে এত ভিড় হয়নি। আজ ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের ভিড় বেড়েছে। আগামী দুদিন যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যাত্রী বেশি লঞ্চে।

ঢাকা-বরিশাল রুটে এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফ আমিরুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে যাত্রী বেশ বেড়েছে। বেশিরভাগ কেবিনগুলো থেকেই বুকিং দেওয়ায় কোনো কেবিনই খালি যাচ্ছে না। তবে ডেকে গাদাগাদি অবস্থাটা নেই।

যাত্রীর চাপ বাড়ায় কেবিনগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান যাত্রীরা। তবে বরিশালগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও ভোলাগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী।

পটুয়াখালীর যাত্রী রাসেল শিকদার বলেন, ঘাটে অনেকটা সময় আগেই এসেছি কেবিন বুকিং দিতে। ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে কেবিন পেয়েছি। অবশ্য ঈদের সময়, ভাড়া তো একটু বেশি নেবেই। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করব- এই আনন্দটাই অনেক। যাত্রায় কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে আশা করছি।

এদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ-লিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসন বলেন, এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে। তবে ঘরমুখী মানুষের স্রোত কার্যত শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। ওইদিন থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ঈদের আগের দুদিনসহ সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়ছে। এই হিসেবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যাবে বলে আশা করা যায়। নৌযানের কোনো স্বল্পতা নেই, সোমবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে গেছে সারা দিনে ৫৮টি, রাতে আরও বেশ কিছু লঞ্চ ছাড়বে। আমরা গড়ে প্রতিদিন ১০০টি লঞ্চ প্লাটুনে রেডি রাখছি।

এমভি মিতালীর যাত্রী মফিজুল ইসলাম খান বলেন, অন্য বছর এই সময়ে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা থাকতো অনেক। সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চাঁদপুরে এসেছি। তবে এবারের লঞ্চ যাত্রা খুবই আরামদায়ক হয়েছে। তিনি চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী এলাকার বাসিন্দা। ঢাকা থেকে আসা মতলব দক্ষিণের যাত্রী ফাহিমা বেগম বলেন, সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে এসেছেন। এবারের যাত্রা খুবই আরামদায়ক হয়েছে। কোনো কষ্টই মনে হয়নি।

ঢাকায় প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন শরীফ হোসেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে। লঞ্চে ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে সব সময় ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে বাড়িতে যান। তবে এবার লঞ্চে কোন ভিড় নেই, ভাড়াও আগের মতো।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, বিগত বছরগুলোতে এমন যাত্রী ছিল ঘাটে দাঁড়ানোর অবস্থা থাকত না। তবে এবার যাত্রী সংখ্যা খুবই কম। আগামীকাল যদি যাত্রী আরে বেশিও থাকে তাতে কোন সমস্যা হবে না। আমাদের ২৪টি বিলাসবহুল লঞ্চ আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আর কোন ধরনের সমস্যা নেই। নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দুপুরে লঞ্চঘাট পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি যাত্রী ও অটোরিকশা চালকদের মাঝে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

ট্রাফিক পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, ঈদে সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো যাতে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, কোন ধরনের ডাকাতি কিংবা অন্য ঘটনার শিকার না হয়। সে জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। ঘাটে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যাত্রীরা কোন ধরনের হয়রানির অভিযোগ করলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech